স্ট্রোক সাধারণত বয়স্কদের রোগ হিসেবে বিবেচিত হলেও, বর্তমান সময়ে কম বয়সীদের মধ্যেও স্ট্রোকের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার ধরন, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা এর পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তরুণ বয়সেই স্ট্রোক হওয়া শরীরের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক। চলুন জেনে নিই, কম বয়সীদের মধ্যে স্ট্রোকের কারণ এবং এর প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে।
কম বয়সীদের মধ্যে স্ট্রোকের কারণ:
১. উচ্চ রক্তচাপ: অনেক তরুণই আজকাল উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, যা স্ট্রোকের অন্যতম বড় কারণ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
২. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, এবং অতিরিক্ত চর্বি ও সোডিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে কোলেস্টেরল বাড়ে, যা রক্তনালীর প্রাচীরগুলোতে চর্বি জমা করে। এটি রক্ত চলাচল ব্যাহত করে, ফলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
৩. ধূমপান ও মদ্যপান: ধূমপান ও মদ্যপান সরাসরি রক্তনালীগুলোর ক্ষতি করে এবং রক্তের চাপ বাড়ায়। ফলে তরুণদের মধ্যেও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
৪. ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। কম বয়সীদের ডায়াবেটিসও আজকাল একটি বড় সমস্যা।
৫. স্থূলতা ও শরীরচর্চার অভাব: শরীরচর্চা না করা এবং স্থূলতা স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত ওজন হৃদযন্ত্র এবং রক্তচলাচলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ায়।
৬. অতিরিক্ত মানসিক চাপ: তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগজনিত সমস্যা বেড়ে গেছে। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ হৃদযন্ত্র এবং রক্তচলাচলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়:
১. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন: রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, এবং রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। এতে শরীরের কোনো সমস্যার আগাম ইঙ্গিত পাওয়া যায় এবং সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন: প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, এবং ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে হবে। চর্বিযুক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
৩. শরীরচর্চা করুন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে হৃদযন্ত্র এবং রক্তনালীগুলোর ওপর চাপ কমে।
৪. ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন: ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তচলাচল এবং রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এগুলো পরিহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করুন: মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, কিংবা অন্যান্য রিলাক্সেশনের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। মানসিক সুস্থতা শারীরিক সুস্থতার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
৬. পর্যাপ্ত ঘুম নিন: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। কম ঘুম বা অনিদ্রা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
কম বয়সীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি ক্রমবর্ধমান। তবে সঠিক জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।