কিডনিতে পাথর বা কিডনি স্টোন হলো এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক এবং গুরুতর হতে পারে। সাধারণত শরীরের অতিরিক্ত খনিজ ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ জমা হয়ে কিডনির ভেতরে ছোট পাথরের মতো কঠিন বস্তু তৈরি হয়। এটি তখনই ঘটে যখন প্রস্রাবের মাধ্যমে এই খনিজ পদার্থগুলো সঠিকভাবে বেরিয়ে না গিয়ে কিডনিতে জমা হয়। পর্যাপ্ত পানি না পান করা, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাব এবং কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। চলুন, কিডনিতে পাথর কেন হয় এবং কীভাবে এর প্রতিরোধ করা যায় সে সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করি।
কিডনিতে পাথর কেন হয়?
পানি কম পান করা: কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো পর্যাপ্ত পানি পান না করা। শরীরের পর্যাপ্ত পানি না পেলে মূত্র ঘন হয়ে যায়, যার ফলে মূত্রে থাকা খনিজ পদার্থগুলো জমা হয়ে পাথরে পরিণত হয়।
খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা: উচ্চমাত্রার লবণ, চিনি এবং প্রাণীজ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত লবণ শরীরে সোডিয়াম জমার কারণ হতে পারে, যা ক্যালসিয়াম নির্গমনের হার কমিয়ে পাথর তৈরি করে।
জেনেটিক ফ্যাক্টর: পারিবারিক ইতিহাসও কিডনিতে পাথর হওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। যাদের পরিবারে এই সমস্যা রয়েছে, তাদের মধ্যে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
স্বাস্থ্যগত সমস্যা: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এবং দীর্ঘমেয়াদী কিছু ওষুধ সেবনও কিডনিতে পাথর তৈরির কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম এবং অক্সালেট: কিছু নির্দিষ্ট খাবার যেমন শাকসবজি, বাদাম এবং চকলেট বেশি পরিমাণে খেলে শরীরে অক্সালেট জমা হয়, যা কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে।
কিডনিতে পাথর প্রতিরোধের উপায়:
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন: প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। এটি মূত্রের মাধ্যমে খনিজ পদার্থগুলোকে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করবে এবং পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমাবে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন: লবণ, প্রোটিন ও চিনিযুক্ত খাবার পরিমাণে কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন। পাথর প্রতিরোধের জন্য সবুজ শাকসবজি ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত।
নিয়মিত প্রস্রাব করা: প্রস্রাব চেপে রাখা উচিত নয়। দীর্ঘ সময় প্রস্রাব চেপে রাখলে কিডনিতে খনিজ পদার্থ জমা হতে পারে এবং পাথর তৈরির সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা: অতিরিক্ত মিষ্টি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এগুলো কিডনিতে পাথর তৈরির সম্ভাবনা বাড়ায়।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান: পারিবারিক ইতিহাস থাকলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। এর মাধ্যমে আগে থেকেই পাথর তৈরির ঝুঁকি নির্ধারণ করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
রঙের মিশ্রণ ও অন্যান্য খাদ্যগত সমস্যা: কিছু খাবারে ক্ষতিকারক রাসায়নিক এবং রং মেশানোর কারণে কিডনিতে খনিজ পদার্থ জমতে পারে, যা পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই এমন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
কিডনিতে পাথর একটি জটিল সমস্যা, তবে সঠিক জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। পর্যাপ্ত পানি পান করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোই কিডনিতে পাথর প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। শরীরে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।