শিশুরা কেন মিথ্যা বলে, কী করবেন?

শিশুরা বিভিন্ন কারণে মিথ্যা বলে থাকে, যা কখনো সচেতনভাবে, আবার কখনো অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটে। এই আচরণ শিশুর স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের অংশ হলেও, বাবা-মা বা অভিভাবকদের জন্য এটি উদ্বেগজনক হতে পারে। মিথ্যা বলার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকে, এবং এর প্রতিকারের জন্য অভিভাবকদেরকে সচেতন হতে হয়।

শিশুরা কেন মিথ্যা বলে?

ভয়: শাস্তি বা তিরস্কারের ভয়ে শিশুরা মিথ্যা বলে। অনেক সময় তারা কোনো কাজ ভুল করে ফেলে এবং এটি ঢাকার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয়।

মনোযোগ আকর্ষণ: শিশুরা প্রায়ই মনোযোগ পেতে মিথ্যা কথা বলে। বিশেষ করে যদি তারা দেখে যে, মিথ্যা বললে তারা বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে।

অনুকরণ: শিশুরা বড়দের আচরণ দেখে শেখে। যদি তারা দেখে যে বড়রা মিথ্যা বলে, তাহলে তারাও মিথ্যা বলার প্রবণতা অর্জন করে।

কল্পনা ও বাস্তবের ফারাক বুঝতে না পারা: ছোট বয়সের শিশুরা কল্পনার জগৎ ও বাস্তব জীবনের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। তাই তারা কল্পিত ঘটনাকে বাস্তব বলে বর্ণনা করে।

আত্মবিশ্বাসের অভাব: অনেক সময় শিশুরা নিজেদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে বা অন্যদের চমকাতে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। তাদের মনে হয়, মিথ্যা বললে তারা অন্যদের চোখে আরও প্রভাবশালী হয়ে উঠবে।

সামাজিক চাপ: কখনও কখনও শিশুরা বন্ধুদের বা আশেপাশের মানুষের চাপে পড়ে মিথ্যা বলে। তারা মনে করে যে, মিথ্যা না বললে তারা অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়বে।

কী করবেন?

খোলামেলা আলোচনা করুন: শিশুদের সঙ্গে সহজভাবে কথা বলুন। তাদের আচরণের পেছনের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন এবং তাদের বুঝতে দিন যে, মিথ্যা বলার কী নেতিবাচক প্রভাব হতে পারে।

শাস্তির ভয় কমান: শিশুরা যদি প্রতিবার সত্য বলার পর শাস্তির সম্মুখীন হয়, তাহলে তারা ভবিষ্যতে মিথ্যা বলার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। শাস্তির পরিবর্তে পরিস্থিতি বুঝে সহানুভূতির সঙ্গে আচরণ করুন।

আত্মবিশ্বাস তৈরি করুন: শিশুদেরকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলুন এবং তাদেরকে এমনভাবে গড়ে তুলুন যেন তারা সত্য বলার গুরুত্ব বুঝতে পারে। তাদেরকে বোঝান যে, সত্যি বলাটা সবসময় শ্রেয়।

সঠিক উদাহরণ দিন: শিশুরা বড়দের থেকে শেখে, তাই অভিভাবক হিসেবে সৎ আচরণ করে একটি ভালো উদাহরণ তৈরি করুন। বড়রা মিথ্যা বললে শিশুদের কাছেও মিথ্যা বলা স্বাভাবিক হয়ে যায়।

মনোযোগ দিন: শিশুরা যদি মিথ্যা বলে মনোযোগ পেতে চায়, তাহলে তাদের জন্য অন্য কোনো গঠনমূলক উপায়ে মনোযোগ দিন। তাদের ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করুন এবং তাদের প্রয়োজনীয় ভালোবাসা ও যত্ন দিন।

আবেগগত সহানুভূতি: শিশুরা কখনো কখনো নিজেদের আবেগ ও চিন্তা প্রকাশ করতে না পেরে মিথ্যা বলে ফেলে। তাদের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে শুনুন এবং প্রয়োজনীয় সমাধান দিন।

শিশুরা বিভিন্ন কারণে মিথ্যা বলে, যা তাদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশের একটি অংশ। মিথ্যা বলার সমস্যার সমাধানে কঠোর শাস্তির বদলে, সহানুভূতিশীল ও ধৈর্যশীল আচরণ অনেক বেশি কার্যকরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *