ঘন ঘন পেট খারাপ হওয়া অনেকের জন্য একটি বড় সমস্যার কারণ হতে পারে। এটি আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে এবং স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। পেট খারাপ হলে হজমের সমস্যার পাশাপাশি ডায়েরিয়া, গ্যাস্ট্রিক, এবং পাকস্থলীর ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে ঘন ঘন পেট খারাপ হলে কিছু সহজ উপায় মেনে চললে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আসুন জেনে নিই পেট খারাপ হলে কী করতে হবে এবং কীভাবে এর প্রতিকার করা যায়।
১. প্রচুর পানি পান করুন
পেট খারাপ হলে শরীরে পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) তৈরি হয়, বিশেষ করে ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে। তাই এমন পরিস্থিতিতে প্রচুর পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া নারকেল পানি বা স্যালাইন পান করতে পারেন, যা শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
২. হালকা খাবার খান
পেট খারাপ হলে হালকা এবং সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত। ভাত, সেদ্ধ আলু, টোস্ট, অথবা কলা এমন খাবার যা পাকস্থলীতে চাপ কম ফেলে এবং সহজে হজম হয়। এর ফলে আপনার পেটের সমস্যা কমে আসতে পারে।
৩. মশলাযুক্ত এবং ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন
মশলাযুক্ত ও ভাজা খাবার পেট খারাপের অন্যতম কারণ হতে পারে। এ ধরনের খাবার পাকস্থলীতে গ্যাস তৈরি করতে পারে এবং পেটের ব্যথা ও ফোলাভাব বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই পেট খারাপ হলে এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
৪. ইউগার্ট বা দই খান
দই একটি প্রোবায়োটিক খাবার, যা হজমশক্তি উন্নত করতে সহায়ক। এতে থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়া পেটের ব্যাকটেরিয়া ভারসাম্য বজায় রাখে এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ করে। ফলে পেট খারাপ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে।
৫. ধীরে ধীরে খাওয়া
খাওয়ার সময় ধীরে ধীরে খাওয়া উচিত, বিশেষ করে পেট খারাপ হলে। দ্রুত খাবার খেলে শরীরের হজম প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে এবং গ্যাস, ফোলাভাবের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই খাবার ভালো করে চিবিয়ে ধীরে ধীরে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৬. চা পান করুন
পেট খারাপ হলে আদা চা, পুদিনা চা, অথবা ক্যামোমাইল চা উপকারী হতে পারে। এসব চা পাকস্থলীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং হজমে সহায়তা করে। তবে চিনি মিশিয়ে চা পান না করাই ভালো, কারণ চিনি পেটের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
৭. ডাক্তারের পরামর্শ নিন
যদি ঘন ঘন পেট খারাপ হয় এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পেট খারাপের পেছনে অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে, যেমন: ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS), গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস, অথবা খাদ্যে অ্যালার্জি। এসব সমস্যার জন্য বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
৮. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
পেট খারাপ এড়াতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যতালিকায় বেশি করে ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন, যেমন: সবজি, ফলমূল, এবং সাদা ভাত। পাশাপাশি, পরিমাণমতো পানি পান করুন এবং বাইরের অনিরাপদ খাবার এড়িয়ে চলুন।
৯. ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা করুন
ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে শরীর থেকে প্রচুর ইলেকট্রোলাইট বেরিয়ে যায়। তাই ইলেকট্রোলাইট সাপ্লিমেন্ট বা স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। এটি শরীরকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করবে।
১০. পেট ম্যাসাজ
পেটের ফোলাভাব বা গ্যাসের কারণে পেট খারাপ হলে, পেট ম্যাসাজ করা একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। বিশেষ করে হালকা হাতে পেটের ওপর ম্যাসাজ করলে তা গ্যাসের সমস্যা দূর করতে সহায়ক হতে পারে।
ঘন ঘন পেট খারাপ হলে দ্রুত এর প্রতিকার করা জরুরি। প্রচুর পানি পান, হালকা খাবার খাওয়া, এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা পেট খারাপের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। তবে যদি দীর্ঘমেয়াদে পেট খারাপ অব্যাহত থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া উচিত।