আজকের আধুনিক জীবনে মোবাইল ফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠেই বালিশের পাশে রাখা ফোনটি হাতে তুলে নেন—মেসেজ, ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, বা নিউজ চেক করতে। যদিও এটি একটি সাধারণ অভ্যাস বলে মনে হয়, তবে এই অভ্যাসটি শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকেই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক কেন এই অভ্যাসটি বদলানো জরুরি এবং কীভাবে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
ক্ষতিকর প্রভাব
মানসিক চাপ বৃদ্ধি
সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফোন চেক করার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক অপ্রয়োজনীয় তথ্যের ভারে নিমজ্জিত হয়। বিভিন্ন মেসেজ, ইমেইল বা নিউজের মাধ্যমে আমাদের কাছে অনেক তথ্য চলে আসে, যা দিনের শুরুতেই মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এটি মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে এবং সারাদিন অস্থির বোধ করার কারণ হতে পারে।
মেজাজের পরিবর্তন
ফোনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা খবর চেক করার ফলে নেতিবাচক সংবাদ বা কোন খারাপ বার্তা চোখে পড়লে সারাদিনের জন্য খারাপ মেজাজ তৈরি হতে পারে। এক মুহূর্তে ভালো বা খারাপ কিছু দেখে আমাদের মেজাজ প্রভাবিত হতে পারে, যা পুরো দিনের কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে পারে।
চোখের উপর চাপ
সকালে উঠে প্রথমেই ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকানো আমাদের চোখের জন্যও ক্ষতিকর। চোখের পেশি ঘুম থেকে জাগার পর সম্পূর্ণরূপে বিশ্রামপ্রাপ্ত অবস্থায় থাকে, আর ফোনের উজ্জ্বল আলোতে সরাসরি তাকানো চোখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদে চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যার কারণ হতে পারে।
সকালের মূল্যবান সময় নষ্ট করা
ফোন হাতে নিয়ে সময় কাটাতে গিয়ে কখন যে সকাল পার হয়ে যায় তা আমরা বুঝতেও পারি না। এটি সকালে প্রয়োজনীয় কাজ করার সময় কমিয়ে দেয় এবং একটি সক্রিয় দিন শুরু করার সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করে। এতে দিনের প্রথম ঘন্টাগুলো অনুৎপাদনশীল হয়ে যায়।
ঘুমের মান কমানো
সকালে উঠে ফোন চেক করা আমাদের মস্তিষ্ককে অকারণে উত্তেজিত করে তোলে, যা সারাদিন মস্তিষ্কের উপর একটি অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে, রাতে ভালো ঘুম না হওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে। ঘুমের মান কমে গেলে আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও প্রভাবিত হয়।
কীভাবে এই অভ্যাসটি বদলাবেন?
ফোনের বিকল্প কিছু রাখুন
ঘুম থেকে উঠে ফোন চেক করার পরিবর্তে অন্য কোনো স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন। এক কাপ চা বা কফি পান করতে পারেন, কিছুক্ষণ বই পড়তে পারেন বা বাইরে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। এতে আপনার মস্তিষ্ককে সকালেই রিফ্রেশ করার সুযোগ পাবেন।
ফোন দূরে রাখুন
রাতের সময় ঘুমানোর আগে ফোন বালিশের পাশে না রেখে দূরে রাখুন। ফোনটি ঘরের অন্য কোথাও রাখলে সকালে চোখ খুলেই এটি হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা কমবে। এতে আপনি প্রথমেই ফোনের স্ক্রিনে তাকানোর অভ্যাস থেকে মুক্তি পাবেন।
মর্নিং রুটিন তৈরি করুন
একটি নিয়মিত সকালের রুটিন তৈরি করুন, যেখানে ফোনের পরিবর্তে অন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারেন। সকালের কিছু সময় শরীরচর্চা, মেডিটেশন বা ধ্যান করতে পারেন। এটি মন এবং শরীর দুটোই সতেজ করবে এবং পুরো দিনটাকে ইতিবাচকভাবে শুরু করতে সাহায্য করবে।
ফোনের নোটিফিকেশন বন্ধ করুন
রাতের বেলা ফোনের নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখুন যাতে সকালে ঘুম থেকে উঠেই নোটিফিকেশন দেখে উদ্বিগ্ন না হতে হয়। এতে করে আপনার সকালে অন্য কাজে মনোযোগ দেওয়া সহজ হবে।
সকালের প্রথম কাজ ফোন চেক করা নয়
ফোন চেক করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন, যেন ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে ফোন চেক করতে না হয়। এটি আপনার সকালের প্রয়োজনীয় কাজগুলি করার সুযোগ তৈরি করবে এবং ফোনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফোন হাতে নেওয়া একেবারে নিরীহ অভ্যাস বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই এই অভ্যাসটি বদলে স্বাস্থ্যকর সকালের রুটিন গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দিন। এতে করে আপনি আপনার দিনটি আরও কার্যকর ও ইতিবাচকভাবে শুরু করতে পারবেন।