নিয়মিত ব্যায়াম করা শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। তবে অনেকেই ব্যায়াম শুরু করার ক্ষেত্রে অলসতা অনুভব করেন, যা এই ভালো অভ্যাসটিকে শুরু করাকে কঠিন করে তোলে। অলসতার পেছনে মানসিক ও শারীরিক উভয় কারণ থাকতে পারে। এই প্রতিবেদনটি আলোচনা করবে কেন এক্সারসাইজ শুরু করতে অলসতা হয় এবং কীভাবে এই বাধা কাটিয়ে ওঠা যায়।
এক্সারসাইজ শুরু করা নিয়ে অলসতা কেন হয়?
উদ্দীপনার অভাব: ব্যায়াম শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্দীপনা বা মোটিভেশন অনেক সময় না থাকলে অলসতা দেখা দেয়। যারা ব্যায়াম করতে পছন্দ করেন না, তারা এটি সহজে এড়িয়ে চলেন। ব্যায়ামকে কঠিন বা সময়সাপেক্ষ ভাবলে আগ্রহ হারিয়ে যেতে পারে।
সময় ও পরিকল্পনার অভাব: অনেকেই মনে করেন যে তাদের ব্যস্ত জীবনে এক্সারসাইজের জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই। দিনের অন্যান্য কাজের চাপের মধ্যে ব্যায়ামকে জায়গা দেওয়া কঠিন মনে হতে পারে। এছাড়া, সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে ব্যায়াম শুরু করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ মনে হয়।
শারীরিক ক্লান্তি: অতিরিক্ত কাজের চাপ, ঘুমের অভাব, কিংবা মানসিক চাপের কারণে শারীরিক ক্লান্তি দেখা দিতে পারে, যা ব্যায়াম শুরু করার আগ্রহকে কমিয়ে দেয়। ক্লান্ত অবস্থায় এক্সারসাইজ করা মানসিকভাবে কষ্টকর বলে মনে হয়।
আত্মবিশ্বাসের অভাব: অনেকেই মনে করেন, তারা ব্যায়ামে ভালো নন বা শারীরিকভাবে সক্ষম নন। আত্মবিশ্বাসের অভাবে তারা ভীত হয়ে পড়েন, এবং এক্সারসাইজ শুরু করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: কিছু মানুষ মানসিক চাপ ও উদ্বেগের কারণে ব্যায়াম শুরু করতে চান না। উদ্বিগ্ন হলে বা মানসিকভাবে চাপ অনুভব করলে শরীরকে ব্যায়ামের জন্য প্রস্তুত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এক্সারসাইজ শুরু করার উপায়
অলসতা কাটিয়ে নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা সম্ভব কিছু ছোট্ট পদক্ষেপের মাধ্যমে। নিচে ব্যায়াম শুরু করার কিছু কার্যকরী উপায় দেওয়া হলো:
ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: ব্যায়াম শুরু করার জন্য খুব বড় বা কঠিন লক্ষ্য নির্ধারণ করার প্রয়োজন নেই। ছোট ও সহজ লক্ষ্য দিয়ে শুরু করুন। যেমন, প্রথম দিন শুধু ১০-১৫ মিনিট হাঁটা বা হালকা স্ট্রেচিং করা। ছোট লক্ষ্যগুলো পূরণ করা সহজ এবং তা আপনার মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও উদ্দীপনা বৃদ্ধি করবে।
একটি সময়সূচি তৈরি করুন: ব্যায়ামকে প্রতিদিনের রুটিনের অংশ হিসেবে তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি সময় নির্ধারণ করুন, যখন আপনি ব্যায়াম করবেন। এটি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর হতে পারে, অথবা দিনের কাজ শেষে। ব্যায়ামকে একটি দৈনন্দিন অভ্যাস হিসেবে গ্রহণ করলে অলসতা ধীরে ধীরে কমে আসবে।
প্রিয় ব্যায়াম বেছে নিন: আপনার পছন্দের কোনো ব্যায়াম বা শারীরিক কার্যক্রম খুঁজে বের করুন। যদি আপনি দৌড়াতে পছন্দ না করেন, তবে সাঁতার, যোগব্যায়াম, সাইক্লিং বা নাচের মতো কিছু করতে পারেন। প্রিয় কিছু করলে সেটা করতে আনন্দ আসে, এবং অলসতার অনুভূতি কমে যায়।
সহজভাবে শুরু করুন: প্রথমে হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করা উচিত, যাতে শরীর আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে পারে। যদি শুরুতেই কঠিন ব্যায়াম করা হয়, তাহলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়বে, এবং সেই অভ্যাসটি চালিয়ে যেতে সমস্যা হতে পারে। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের সময় ও তীব্রতা বাড়ানো যেতে পারে।
বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে শুরু করুন: যদি একা এক্সারসাইজ করা কঠিন মনে হয়, তবে কোনো বন্ধু বা পরিবারের সদস্যকে আপনার সঙ্গী হিসেবে নিন। একসঙ্গে ব্যায়াম করলে তা আরও আনন্দদায়ক ও সহজ হয়ে যায়। একে অপরকে উৎসাহিত করতে পারেন, যা মোটিভেশন বাড়ায়।
সফলতার মাইলফলক গড়ে তুলুন: প্রতিটি ছোট সাফল্যকে উদযাপন করুন। আপনার ব্যায়ামের লক্ষ্য পূরণ হলে নিজেকে ছোট পুরস্কার দিন। এটি হতে পারে একটি বিশেষ খাবার, নতুন পোশাক, বা একটি নতুন ব্যায়াম সরঞ্জাম। এতে আপনি প্রতিদিন আরও ভালো করার জন্য উদ্দীপ্ত হবেন।
সামান্য হলেও কিছু করুন: কখনো যদি মনে হয় ব্যায়াম করার মতো শক্তি বা ইচ্ছা নেই, তবু সামান্য কিছু করুন। পাঁচ মিনিটের একটি ছোট স্ট্রেচিংও আপনাকে অলসতা থেকে মুক্তি দিতে পারে এবং দিনটি শুরু করতে সহায়তা করবে। ব্যায়ামের ছোট কাজগুলোও ধীরে ধীরে বড় অভ্যাসে পরিণত হবে।
এক্সারসাইজ শুরু করার ক্ষেত্রে অলসতা একটি সাধারণ সমস্যা, তবে এটি অতিক্রম করা সম্ভব। সঠিক পরিকল্পনা, ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ, এবং পছন্দের ব্যায়াম বেছে নেওয়ার মাধ্যমে অলসতা কাটিয়ে নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ শুরু করা যায়। নিয়মিত এক্সারসাইজ শুধু শরীরকে সুস্থ রাখে না, এটি মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে, ফলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।