ঘুম শরীরের জন্য একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া, যা আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, সঠিক সময়ে ঘুমানো এবং কতক্ষণ ঘুমানো উচিত, তা জানা অনেকের জন্যই জটিল হতে পারে। এই প্রতিবেদনে আমরা ঘুমের সঠিক সময় এবং তার দৈর্ঘ্য সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরব।
কখন ঘুমাবেন?
রাত ১০টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে: গবেষণায় দেখা গেছে, রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ঘুমানো শুরু করা সবচেয়ে উপকারী। এই সময়ে ঘুমাতে গেলে শরীরের ভেতরের ঘড়ি (সার্কাডিয়ান রিদম) সঠিকভাবে কাজ করে, যা আপনাকে গভীর ঘুমের দিকে নিয়ে যায়।
বিকেলের সেশনে সংক্ষিপ্ত ঘুম: যদি রাতে দেরিতে ঘুমাতে না পারেন, তাহলে বিকেলে ২০-৩০ মিনিটের একটি সংক্ষিপ্ত ঘুম শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে, এটি রাতের ঘুমের পরিবর্তে ব্যবহার করা উচিত নয়।
বয়স অনুযায়ী ঘুমের প্রয়োজনীয়তা
ঘুম আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বয়স অনুযায়ী ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হয়। শিশুদের জন্য, যারা ১-২ বছর বয়সী, দৈনিক ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ৩-৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এটি ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা। কিশোর বয়সে, অর্থাৎ ৬ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
বয়ঃসন্ধিকালে, ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী যুবকদের জন্য ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুম নেওয়া উচিত। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, যারা ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সী, ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। অবশেষে, বৃদ্ধদের, অর্থাৎ ৬৫ বছর ও তার বেশি বয়সীদের জন্য ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট। এই তথ্যগুলো নিশ্চিত করে যে, প্রতিটি বয়সের মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
ঘুমের মান: সময়ের চেয়ে ঘুমের মানও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গভীর ঘুম, যে সময়ে শরীর রিফ্রেশ হয় এবং মস্তিষ্ক নতুন তথ্য প্রক্রিয়া করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
ঘুমের সময় নিয়ন্ত্রণের জন্য টিপস
নিয়মিত সময়ে ঘুমানো: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে উঠা অভ্যাস করুন। এটি শরীরের অভ্যস্ততা তৈরি করবে।
মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার কমানো: ঘুমানোর আগে ফোন, ট্যাবলেট বা কম্পিউটার ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, কারণ ব্লু লাইট ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের উৎপাদন কমায়।
সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করা: ঘুমানোর সময় ঘরটি অন্ধকার, শান্ত ও ঠাণ্ডা রাখুন। আরামদায়ক বিছানা এবং বালিশ ব্যবহার করুন।
প্রাকৃতিক ঘুমের রুটিন: দিনের সময় শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ান এবং ক্যাফিন জাতীয় পানীয়ের ব্যবহার কমান।
ঘুমের উপকারিতা
মানসিক স্বাস্থ্য: পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার লক্ষণ হ্রাস করতে সাহায্য করে।
শারীরিক স্বাস্থ্য: সঠিক ঘুম হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
পণ্যকারিতা বৃদ্ধি: সঠিক ঘুম আপনার মনোযোগ এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ায়, যা কাজের ক্ষেত্রে সহায়ক।
ঘুমের সঠিক সময় এবং দৈর্ঘ্য নিশ্চিত করা স্বাস্থ্যকর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিজস্ব অভ্যাস তৈরি করতে এবং স্বাস্থ্যকর ঘুমের রুটিন তৈরি করতে এই তথ্যগুলি আপনাকে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, প্রতিটি ব্যক্তির ঘুমের চাহিদা ভিন্ন হতে পারে, তাই আপনার শরীরের সংকেতগুলো শুনুন এবং সেই অনুযায়ী ঘুমের সময়সূচী তৈরি করুন।