ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা কমানোর উপায়গুলো জেনে নিন!

নাক ডাকা শুধু যে বিরক্তিকর তা-ই নয়, এটি আপনার এবং আপনার সঙ্গীর ঘুমের মানকে প্রভাবিত করতে পারে। অনেক সময় নাক ডাকার সমস্যা স্বাস্থ্যের গুরুতর ইঙ্গিত দেয়, যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া। তবে কিছু সহজ উপায় মেনে চললে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার প্রবণতা কমানো সম্ভব। নাক ডাকা কমানোর কিছু কার্যকরী উপায় নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো:

১. ঘুমের অবস্থান পরিবর্তন করুন
চিৎ হয়ে ঘুমানোর সময় নাক ডাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ সময় জিহ্বা ও গলার পেশি শিথিল হয়ে পেছনের দিকে চলে যায়, যা শ্বাসনালীর পথ আটকে দেয়। পাশ ফিরে শোওয়া নাক ডাকা কমাতে সহায়ক হতে পারে। যদি চিৎ হয়ে শোওয়া আপনার অভ্যাস হয়ে থাকে, তবে পিঠে একটি বল বা বালিশ রাখুন যাতে আপনি পাশ ফিরতে বাধ্য হন।

২. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন
ওজন বেড়ে গেলে ঘাড়ে বাড়তি মাংসপেশি তৈরি হয়, যা শ্বাসনালীর পথ সংকীর্ণ করে নাক ডাকার কারণ হতে পারে। তাই ওজন কমানো হলে নাক ডাকার সমস্যা কমে আসতে পারে। বিশেষ করে যারা সাম্প্রতিক সময়ে ওজন বৃদ্ধি পেয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি কার্যকরী হতে পারে।

৩. নাক পরিষ্কার রাখুন
যদি আপনার নাক বন্ধ থাকে, তবে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য মুখ খোলা রাখতে হয়, যার ফলে নাক ডাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই ঘুমানোর আগে নাক পরিষ্কার রাখা উচিত। নাকের বাতাস চলাচল ঠিক রাখার জন্য ন্যাসাল স্প্রে, বাষ্প গ্রহণ, বা স্যালাইন ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।

৪. আর্দ্র পরিবেশে ঘুমান
শুষ্ক পরিবেশ গলার টিস্যু ও নাকের পথ শুষ্ক করে তোলে, যা শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে এবং নাক ডাকার কারণ হতে পারে। ঘরের বাতাস আর্দ্র রাখার জন্য হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ঘুমের সময় শ্বাসনালীর আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।

৫. ধূমপান এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
ধূমপান গলা ও শ্বাসনালীর টিস্যুতে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা শ্বাসনালী সংকুচিত করে নাক ডাকার কারণ হয়। এছাড়া, অ্যালকোহল পেশিগুলিকে বেশি শিথিল করে দেয়, যার ফলে ঘুমের সময় শ্বাসনালীর পথ আটকে যায়। তাই ধূমপান এবং অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত।

৬. রাতে ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন
ঘুমানোর আগে ভারী খাবার, বিশেষ করে দুধজাত খাবার খেলে শ্বাসনালীতে মিউকাস জমতে পারে, যা নাক ডাকার কারণ হতে পারে। ঘুমানোর অন্তত ৩ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খাওয়া উচিত, এবং খুব বেশি মশলাযুক্ত বা দুধজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

৭. স্লিপিং পজিশনের বালিশ ব্যবহার করুন
একটি বিশেষ ধরনের বালিশ ব্যবহার করলে ঘাড় এবং মাথার অবস্থান সঠিক থাকে, যা শ্বাসনালীকে খোলা রাখে এবং নাক ডাকা কমায়। এগুলোকে ‘অ্যান্টি-স্নোর পিলো’ বলা হয়, যা আপনার ঘুমের সময় মাথা সঠিক উচ্চতায় রাখতে সাহায্য করে।

৮. মুখের ব্যায়াম করুন
মুখ ও গলার পেশি শিথিল হয়ে গেলে নাক ডাকার প্রবণতা বাড়ে। তাই মুখের পেশি শক্তিশালী করতে মুখের ব্যায়াম করতে পারেন। প্রতিদিনের এই ব্যায়ামগুলো শ্বাসনালীকে খোলা রাখতে সাহায্য করে।

৯. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
অনেক সময় পর্যাপ্ত ঘুম না পেলে শরীর অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ে, যা পেশিগুলিকে অস্বাভাবিকভাবে শিথিল করে দেয়। এতে শ্বাসনালীর পথ সংকুচিত হয়ে নাক ডাকা শুরু হয়। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা উচিত।

১০. ডাক্তারি পরামর্শ নিন
যদি নাক ডাকা তীব্র হয় এবং অন্যান্য কোনো উপায়ে সমাধান না হয়, তবে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। স্লিপ অ্যাপনিয়া বা শ্বাসকষ্টজনিত কোনো সমস্যার কারণেও নাক ডাকা হতে পারে, যা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসক নাকের স্প্রে, মুখের যন্ত্রপাতি বা সিপিএপি মেশিনের ব্যবহার পরামর্শ দিতে পারেন।

নাক ডাকা শুধু যে একটি বিরক্তিকর সমস্যা তা নয়, এটি কখনও কখনও স্বাস্থ্যগত গুরুতর সমস্যারও লক্ষণ হতে পারে। তাই নাক ডাকা কমানোর উপায়গুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার এবং আপনার সঙ্গীর ঘুমের মান বাড়াতে পারেন। তবে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *