বাবা-মায়ের কিছু বদঅভ্যাস কেড়ে নিতে পারে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে বাবা-মায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে পরিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকে। বিশেষ করে বাবা-মায়ের আচরণ ও অভ্যাস তাদের সন্তানের মানসিক অবস্থার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। যখন বাবা-মা ভুল আচরণ, বদঅভ্যাস বা নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন, তখন তা শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

আসুন, জানি কোন কিছু কিছু বদঅভ্যাস শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে:

অতিরিক্ত শাস্তি বা শারীরিক নির্যাতন
শিশুকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কঠোরতা বা শারীরিক নির্যাতন তার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অত্যন্ত খারাপ প্রভাব ফেলে। এই ধরনের আচরণ শিশুর মধ্যে ভয়, অবিশ্বাস এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক শাস্তি শিশুর মধ্যে হতাশা, আক্রমণাত্মক আচরণ এবং আত্মবিশ্বাসহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। শিশুর মনের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে এমন শাস্তি ও নির্যাতন কেবল শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও তাকে আঘাত দেয়।

সম্পর্কের মধ্যে অস্থিরতা এবং ঝগড়া
যদি বাবা-মা একে অপরের সঙ্গে বা পরিবারে অনবরত ঝগড়া করে, তাহলে শিশুর মনে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুর মন খুবই সংবেদনশীল, এবং সে সবকিছু শিখে তার কাছ থেকে। যখন বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পর্কের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয় বা তারা একে অপরের সঙ্গে নিরন্তর দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকে, তখন শিশুর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা এবং মানসিক চাপ তৈরি হয়। এটি তার আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক আচরণে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

অতিরিক্ত চাপ বা আশা
বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে সন্তানকে অতিরিক্ত চাপ দেওয়ার কারণে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পরিবারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের উচ্চমানের প্রত্যাশা সন্তানের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে পড়াশোনা, ক্যারিয়ার বা অন্যান্য পারফরম্যান্স নিয়ে অতিরিক্ত চাপ তাকে দুশ্চিন্তা ও অবসাদগ্রস্ত করতে পারে। শিশু যখন বাবা-মায়ের আশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন তার আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অবহেলা এবং অবজ্ঞা
বাবা-মা যদি তাদের সন্তানের প্রতি অবহেলা বা অবজ্ঞা দেখান, তাহলে শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং মানসিক যন্ত্রণা তৈরি হয়। শিশুর জীবনে সঙ্গী এবং রক্ষক হিসেবে বাবা-মায়ের দায়িত্ব হল তার অনুভূতিকে গুরুত্ব দেওয়া এবং তাকে নিরাপদ, ভালোবাসা ও সহানুভূতির পরিবেশে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা। যখন শিশুকে অযত্নে রাখা হয়, তার অনুভূতি গুরুত্ব দেওয়া হয় না, তখন সে নিজের আত্মমূল্য অনুভব করতে পারে না, যার ফলে তার মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রযুক্তির প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা
বর্তমান যুগে প্রযুক্তি ব্যবহার শিশুদের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। কিন্তু যদি বাবা-মা তাদের শিশুকে প্রযুক্তির প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীল করে তোলেন, তাহলে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল, ট্যাবলেট বা কম্পিউটার ব্যবহার শিশুর সামাজিক দক্ষতা, মনোযোগ এবং সৃজনশীলতা কমিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়াও, শিশু যখন বাবা-মায়ের কাছে একসাথে সময় কাটানোর পরিবর্তে ডিজিটাল মিডিয়ার সাথে সম্পর্কিত হয়, তখন তার মানসিক স্বাস্থ্যে অবসাদ, একাকীত্ব এবং উদ্বেগ তৈরি হতে পারে।

অভাবিত ভালোবাসা এবং মনোযোগ
শিশুদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভালোবাসা এবং মনোযোগ। যদি বাবা-মা তাদের শিশুর প্রতি যথেষ্ট ভালোবাসা ও মনোযোগ না দেন, তবে শিশুর মধ্যে অশান্তি, অবিশ্বাস এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। বাবা-মায়ের কাছ থেকে শোনানো উৎসাহ, প্রশংসা এবং সহানুভূতির অভাব শিশুর আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্বাস্থ্যকে দুর্বল করে দিতে পারে। সন্তানের মনোভাব পরিবর্তন এবং তাদের মনের প্রশান্তি জন্য বাবা-মায়ের ভালোবাসা ও মনোযোগ অপরিহার্য।

বাবা-মায়ের কিছু বদঅভ্যাস এবং নেতিবাচক মনোভাব শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। শিশুর মনের অবস্থা গড়তে বাবা-মায়ের আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই, বাবা-মাদের উচিত তাদের আচরণ এবং অভ্যাসগুলো যাচাই করে শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা। শিশুর বিকাশের জন্য তাদের সুরক্ষিত, ভালোবাসাপূর্ণ এবং ইতিবাচক পরিবেশে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা ভবিষ্যতে মানসিকভাবে শক্তিশালী, আত্মবিশ্বাসী এবং সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *