সারাদিন দাঁত দিয়ে নখ কাটে শিশু? বদভ্যাস ছাড়াবেন কীভাবে?

শিশুদের মধ্যে নখ কাটার অভ্যাস বেশ সাধারণ একটি বিষয়, তবে যখন এটি অতিরিক্ত হয়ে ওঠে এবং দাঁত দিয়ে নখ কাটার মতো বদভ্যাসে পরিণত হয়, তখন তা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এ বদভ্যাসটি শুধু শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে না, বরং মানসিক দিক থেকেও শিশুর উন্নতি বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বাবা-মা বা অভিভাবকদের কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে এই বদভ্যাস ছাড়ানো সম্ভব।

নখ কাটার অভ্যাস: কেন হয়?

শিশুরা সাধারণত দুশ্চিন্তা, অবসাদ, একঘেয়েমি বা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে এই ধরনের অভ্যাস তৈরি করতে পারে। কিছু বিশেষ কারণে শিশুরা নখ কাটতে পারে:

অবসাদ বা একঘেয়েমি: যখন শিশুরা অবসন্ন বা একঘেয়ে অনুভব করে, তখন তারা নিজের অজান্তেই নখ কাটতে শুরু করতে পারে।

মানসিক চাপ বা উদ্বেগ: পরীক্ষার চাপ, পরিবারের অশান্তি বা বন্ধুদের সাথে সম্পর্কের সমস্যা তাদের মানসিক অবস্থা খারাপ করে দিতে পারে, যার ফলে তারা নখ কাটতে শুরু করে।

ভয় বা চিন্তা: ভয় বা চিন্তা মেটানোর জন্য শিশুরা নখ কাটার মতো অভ্যাসে জড়িয়ে পড়তে পারে।

অনুকরণ: শিশুরা যদি দেখে থাকে তাদের আশেপাশে কেউ এই বদভ্যাস করছে, তাহলে তারা সেটা অনুকরণ করতে পারে।

নখ কাটার অভ্যাসের ক্ষতি

নখ কাটার অভ্যাসের অনেক ক্ষতিকর প্রভাব হতে পারে, যেমন:

দাঁতের ক্ষতি: দাঁতের মাধ্যমে নখ কাটার ফলে দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি দাঁতের গঠনও বদলে যেতে পারে।

ইনফেকশন: নখ কাটার ফলে হাতে থাকা ব্যাকটেরিয়া মুখে চলে যেতে পারে, যা মুখের ভিতরে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।

নখের সমস্যা:
নখ কাটার কারণে নখে আঘাত ও চিরুনি তৈরি হতে পারে, যা নখের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে।

মানসিক সমস্যা: দীর্ঘদিন ধরে এই অভ্যাসটি থাকলে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে, এবং তারা বেশি উদ্বিগ্ন বা অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

কীভাবে শিশুকে নখ কাটার অভ্যাস ছাড়াবেন?

ইতিবাচক মনোভাব এবং সহানুভূতি দেখান: শিশুর মধ্যে এই অভ্যাসটি কাটানোর জন্য প্রথমে আপনার মনোভাব ধৈর্যশীল এবং সহানুভূতির হতে হবে। শিশুকে কখনো ধমকানোর চেষ্টা করবেন না, এতে করে তার উদ্বেগ আরো বাড়তে পারে। বরং তাকে বুঝান, কেন এই অভ্যাসটি তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

বিকল্প অভ্যাস গড়ে তুলুন: যখন শিশুটি নখ কাটতে যাবে, তখন তাকে একটি ভালো বিকল্প প্রদান করুন। যেমন, তাকে একটি খেলনা দেয়া, অথবা হালকা কিছু হাতের কাজ করতে বলা। এতে তার মন অন্যদিকে চলে যাবে এবং নখ কাটার প্রবণতা কমে যাবে।

রিমাইন্ডার ব্যবহার করুন: শিশুকে স্মরণ করিয়ে দিন যাতে সে নখ না কাটে। এটি হতে পারে একধরনের সতর্কতা, যেমন একটি স্টিকার বা তার পছন্দের ডিজাইনের রিস্টব্যান্ড ব্যবহার করা যা সে দেখে এবং মনে রাখে।

নখ কাটার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করুন: আপনি যদি দেখেন শিশুটি বেশি সময় ধরে নখ কাটছে, তবে তাকে সময়সীমা দিন, যেমন “১০ মিনিটের মধ্যে থামতে হবে”, এরপর এটি এক ধরনের নিয়ম হয়ে যাবে এবং তার অবচেতন মন এতে অভ্যস্ত হবে।

তাদের অনুভূতি বুঝুন: অনেক সময় শিশুরা নখ কাটার মাধ্যমে তার উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে। আপনি তাদের অনুভূতিগুলো শোনার মাধ্যমে তাদের মানসিক চাপ হালকা করতে পারেন। তাদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করুন যাতে তারা কথা বলতে পারে এবং তাদের চিন্তা ভাবনা ভাগ করতে পারে।

পুরস্কার এবং প্রশংসা দিন: যখন শিশুটি নখ কাটবে না, তখন তাকে প্রশংসা করুন এবং ছোট ছোট পুরস্কার দিন। এটি শিশুকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করবে।

হাতের পরিচর্যা করুন: শিশুদের নখ কাটতে বাধা দিতে চাইলে, তাদের হাতের পরিচর্যা এবং নখ কাটার সময় নির্দিষ্ট করতে পারেন। সুন্দর ও পরিষ্কার নখ রাখতে শিশুকে উৎসাহিত করুন, যাতে তারা নিজের নখের দিকে খেয়াল রাখে।

বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন: যদি অভ্যাসটি অনেক বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে, তবে একজন শিশুর মনোবিদ বা সাইকোলজিস্টের সাহায্য নিতে পারেন। তারা শিশুর আচরণ বুঝে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারবেন।

শিশুর নখ কাটার অভ্যাস শুধুমাত্র একটি শারীরিক বদভ্যাস নয়, এটি তার মানসিক অবস্থা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং, এই অভ্যাসটি দূর করতে ধৈর্য এবং সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। একসাথে কাজ করে এবং শিশুর জন্য একটি নিরাপদ, ভালো পরিবেশ তৈরি করে এই বদভ্যাস থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *