পরিবারে নতুন সদস্যের আগমনের সিদ্ধান্ত যেমন আনন্দের, তেমনি এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে অনেক প্রশ্নও জড়িত। বিশেষ করে প্রথম সন্তানের পর দ্বিতীয় সন্তানের সময় নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকেই ভাবেন, দুই সন্তানের মধ্যে বয়সের পার্থক্য কত হওয়া উচিত? এটি শুধু পরিবারের সামগ্রিক সুখ নয়, সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশেও প্রভাব ফেলে। এই প্রতিবেদনটি সেই বিষয়েই বিস্তারিত।
বয়সের পার্থক্যের সম্ভাব্য সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
কম বয়সের পার্থক্য (১-২ বছর)
সুবিধা: দুই সন্তানের বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা একসঙ্গে হয়। তারা বন্ধুর মতো বড় হয় এবং একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করে।
ছোট সন্তান হওয়ার পর মায়ের কর্মজীবনে ফিরে যাওয়া সহজ হয়।
চ্যালেঞ্জ: বাবা-মায়ের জন্য শারীরিক ও মানসিক চাপ বেশি থাকে। দুই সন্তানের যত্ন নিতে গিয়ে ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। বড় সন্তানের মনোযোগ কম পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মাঝারি বয়সের পার্থক্য (৩-৪ বছর)
সুবিধা: বড় সন্তান কিছুটা স্বাবলম্বী হয়ে যায়, ফলে মায়ের পক্ষে দ্বিতীয় সন্তানের যত্ন নেওয়া সহজ হয়। বড় সন্তান ছোট ভাই বা বোনের প্রতি যত্নশীল হয় এবং তাদের দেখভালে সহায়তা করতে পারে।
চ্যালেঞ্জ: বড় সন্তানের কাছে ছোট ভাই-বোনের আগমন ঈর্ষার কারণ হতে পারে।
বেশি বয়সের পার্থক্য (৫ বা তার বেশি বছর)
সুবিধা: বড় সন্তান পুরোপুরি স্বাবলম্বী হয়ে যায় এবং মায়ের কাছে অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয় না। বড় সন্তান ছোট ভাই বা বোনকে স্নেহ করে এবং তাদের গাইডের মতো আচরণ করে।
চ্যালেঞ্জ: দুই সন্তানের মধ্যে প্রজন্মের ব্যবধান তৈরি হতে পারে এবং তাদের আগ্রহ বা খেলাধুলার ক্ষেত্র আলাদা হতে পারে।
বয়সের ব্যবধান নির্ধারণে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন
মায়ের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য: সন্তান জন্মের পর মায়ের শরীর পুনরায় প্রস্তুত হতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে। তাই মায়ের স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা জরুরি।
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: দুই সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সংস্থান থাকা প্রয়োজন।
পারিবারিক সহায়তা: পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সমর্থন থাকলে ছোট বয়সের ব্যবধান সহজে সামলানো যায়।
বড় সন্তানের মানসিক প্রস্তুতি: বড় সন্তানের মানসিক প্রস্তুতি নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে সে ছোট ভাই বা বোনকে সানন্দে গ্রহণ করে।
কোন বয়সের ব্যবধান সবচেয়ে ভালো?
এটি নির্ভর করে প্রতিটি পরিবারের অবস্থার ওপর। কিছু পরিবার কম বয়সের পার্থক্যকে উপযুক্ত মনে করে, আবার কিছু পরিবার বেশি বয়সের পার্থক্য পছন্দ করে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই থেকে চার বছরের ব্যবধান হলো সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ সময়। এতে বড় সন্তান স্বাবলম্বী হয় এবং ছোট ভাই বা বোনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলে।
শেষ কথা
দুই সন্তানের মধ্যে বয়সের পার্থক্য নির্ধারণ একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, যা পরিবারের শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। তাই সন্তানের মঙ্গল ও পরিবারের সুখের কথা ভেবে সচেতনভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়াই শ্রেয়।