শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য নিয়মিত হাঁটা একটি অন্যতম সহজ ও কার্যকর শারীরিক কার্যকলাপ। এটি শুধু ওজন নিয়ন্ত্রণেই সহায়ক নয়, বরং হৃদ্রোগ প্রতিরোধ, মানসিক চাপ কমানো এবং দীর্ঘায়ু লাভেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে বয়স অনুযায়ী হাঁটার সময় ও ধরণ ভিন্ন হতে পারে। এই প্রতিবেদনে বয়সভেদে প্রতিদিন কত মিনিট হাঁটা উচিত তা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
বয়সভিত্তিক হাঁটার নির্দেশিকা
শিশু (৬-১২ বছর)
সময়: প্রতিদিন ৬০ মিনিট
শিশুদের জন্য হাঁটা মানেই খেলাধুলা বা দৌড়ঝাঁপ। এই বয়সে হাঁটা শরীরের পেশি ও হাড় শক্ত করতে সহায়তা করে।
স্কুলে যাওয়া বা পার্কে খেলা হাঁটার অংশ হতে পারে।
কিশোর-কিশোরী (১৩-১৭ বছর)
সময়: প্রতিদিন ৪৫-৬০ মিনিট
এই বয়সে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ। হাঁটা তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।
স্কুল বা কলেজ থেকে ফিরে বিকেলে হাঁটা বা সাইকেল চালানো ভালো হতে পারে।
তরুণ (১৮-৩০ বছর)
সময়: প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট
এই বয়সে কর্মজীবন বা উচ্চশিক্ষার ব্যস্ততায় অনেকেই হাঁটার সময় পান না। তবে নিয়মিত হাঁটা শরীরকে ফিট রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
সকালে বা সন্ধ্যায় দ্রুত হাঁটা (ব্রিস্ক ওয়াক) সবচেয়ে উপকারী।
প্রাপ্তবয়স্ক (৩১-৫০ বছর)
সময়: প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট
এই বয়সে নিয়মিত হাঁটা হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সহায়ক।
অফিসে যাওয়ার আগে বা রাতে ডিনারের পর হালকা হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো।
মধ্যবয়সী (৫১-৬৫ বছর)
সময়: প্রতিদিন ৩০ মিনিট
এই বয়সে হাঁটা শুধু শারীরিক সুস্থতার জন্য নয়, বরং মানসিক প্রশান্তির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
সকালে হালকা হাঁটা বা বন্ধুদের সঙ্গে পার্কে হাঁটা মানসিক স্বস্তি আনে।
প্রবীণ (৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে)
সময়: প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর দুর্বল হতে পারে। তাই হাঁটা ধীর গতিতে হলেও নিয়মিত হওয়া উচিত।
হাঁটা গাঁটের ব্যথা কমাতে এবং শরীর সচল রাখতে সহায়ক। প্রয়োজনে লাঠি ব্যবহার করে হাঁটতে পারেন।
হাঁটার উপকারিতা
হৃদ্রোগ প্রতিরোধ: প্রতিদিন হাঁটা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ও হৃদ্যন্ত্র সুস্থ রাখে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত হাঁটার মাধ্যমে ক্যালোরি ঝরে এবং ওজন কমাতে সহায়ক হয়।
মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতি: হাঁটার ফলে এন্ডরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মানসিক চাপ কমায় এবং মন ভালো রাখে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: নিয়মিত হাঁটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
সঠিক হাঁটার টিপস
আরামদায়ক পোশাক এবং জুতা ব্যবহার করুন। হাঁটার আগে ও পরে হালকা স্ট্রেচিং করুন। হাঁটার সময় পানি পান করতে ভুলবেন না। দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করুন, তবে খুব বেশি ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত।
যে কোনো বয়সেই হাঁটা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। বয়সভেদে হাঁটার সময়ের পার্থক্য থাকলেও এর উপকারিতা সব বয়সের জন্যই সমান। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুললে সুস্থ, সুন্দর এবং আনন্দময় জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব। সময় করে প্রতিদিন হাঁটুন, সুস্থ থাকুন।