শীত পড়তে না পড়তেই অনেকের হাত-পা বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে যায়। কেউ কেউ মনে করেন এটা স্বাভাবিক, কিন্তু কখনো কখনো এটি হতে পারে শরীরের ভেতরকার কোনো সমস্যার সংকেত। মূলত রক্ত সঞ্চালন, স্নায়ুর কার্যকারিতা বা ত্বকের সংবেদনশীলতার কারণে এমনটা ঘটে। কেন অল্প শীতেই হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায় এবং এর সমাধান কী, তা নিয়েই এই প্রতিবেদন।
হাত-পা ঠাণ্ডা হওয়ার কারণগুলো
রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা: শীতের সময়ে রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়, ফলে শরীরের প্রান্তবর্তী অংশে—যেমন হাত-পা—পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছাতে সমস্যা হয়। এই কারণেই হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে পারে।
রেনডস ডিজিজ: এটি একটি বিশেষ শারীরিক অবস্থা, যেখানে ঠাণ্ডা বা মানসিক চাপের কারণে আঙুলের রক্তনালি সংকুচিত হয় এবং রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। এতে হাত-পায়ের আঙুল সাদা বা নীলচে হয়ে যায় এবং ঠাণ্ডা অনুভূত হয়।
আয়রন বা থাইরয়েডের ঘাটতি: শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকলে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হতে পারে। আবার হাইপোথাইরয়েডিজমে শরীরের মেটাবলিজম কমে গিয়ে শরীর সহজে গরম রাখতে পারে না। ফলে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
লো ব্লাড প্রেসার: যদি রক্তচাপ স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকে, তবে শরীরের প্রান্তবর্তী অংশে রক্তপ্রবাহ দুর্বল হয়। এতে হাত-পা ঠাণ্ডা লাগে।
ডায়াবেটিস বা স্নায়ুর সমস্যা: ডায়াবেটিস বা স্নায়ু সংক্রান্ত কোনো সমস্যার কারণে স্নায়ুগুলো সঠিকভাবে কাজ না করলে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে পারে।
কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করবেন?
উষ্ণ পোশাক পরুন: হাত-পা গরম রাখতে মোজা ও গ্লাভস পরুন। উলের মোজা বা গ্লাভস শীতের ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করতে পারে।
হালকা ব্যায়াম করুন: হাত-পায়ের রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর জন্য হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট হাত ও পায়ের স্ট্রেচিং করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
হট ড্রিংকস পান করুন: চা, কফি বা গরম পানীয় পান করলে শরীর দ্রুত গরম হয়। এতে রক্ত সঞ্চালনও ভালো হয়।
পর্যাপ্ত আয়রন গ্রহণ করুন: আয়রনের অভাব হলে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হতে পারে। তাই আয়রনসমৃদ্ধ খাবার—যেমন পালং শাক, মাংস, ডিম—খাওয়ার অভ্যাস করুন।
স্ট্রেস কমান: মানসিক চাপও হাত-পা ঠাণ্ডা হওয়ার একটি কারণ হতে পারে। তাই ধ্যান বা যোগব্যায়ামের মাধ্যমে স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন।
ডাক্তারি পরামর্শ নিন: যদি নিয়মিত এই সমস্যা দেখা দেয় এবং অন্য কোনো লক্ষণও থাকে, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
শেষ কথা
হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া অনেক সময় স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও যদি এটি নিয়মিত হয় বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত দেয়, তাহলে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তাই শরীরের প্রতি যত্নবান হোন এবং শীতে উষ্ণ থাকার ব্যবস্থা নিন। সঠিক সময়ে সচেতন হলে সুস্থ থাকতে পারবেন।