শিশুদের জন্য শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত কন্যাসন্তানদের জন্য। আধুনিক সমাজে শিশুদের প্রতি নির্যাতন ও শারীরিক হেনস্তার ঘটনা বাড়ছে, যা অভিভাবকদের গভীর চিন্তার মধ্যে ফেলে দেয়। তাই বাবা-মায়ের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে, কন্যাসন্তানদের গুড টাচ এবং ব্যাড টাচের পার্থক্য শেখানো এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
গুড টাচ এবং ব্যাড টাচ কী?
গুড টাচ (ভালো স্পর্শ): গুড টাচ হলো সেই স্পর্শ, যা ভালোবাসা, যত্ন এবং স্নেহের বহিঃপ্রকাশ। এটি যেমন বাবা-মায়ের কোল দেওয়া, হাত ধরা বা পরিবারের কারো থেকে আদরের স্পর্শ হতে পারে, যা শিশুকে নিরাপদ এবং সুখী করে তোলে।
ব্যাড টাচ (খারাপ স্পর্শ): ব্যাড টাচ হলো এমন স্পর্শ, যা শিশুকে অস্বস্তি, ভয় বা লজ্জার মধ্যে ফেলে। এটি অপরিচিত বা কোনো পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা হওয়া এমন স্পর্শ, যা শিশুকে অস্বস্তিকর অনুভূতি দেয় এবং তাদের মানসিক আঘাত করে।
বাবা-মায়ের প্রধান কর্তব্য
খোলা আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা: শিশুকে ছোট থেকেই এমন একটি পরিবেশ দিতে হবে, যেখানে তারা তাদের অনুভূতি এবং সমস্যাগুলো সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করতে পারে। বাবা-মা হিসেবে আপনাকে তাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
সীমারেখা শেখানো: শিশুকে শিখাতে হবে, তাদের শরীর তাদের নিজস্ব। কেউ যদি তাদের অনুমতি ছাড়া স্পর্শ করে এবং তা যদি অস্বস্তিকর হয়, তবে সেটি অবিলম্বে না বলতে শেখানো জরুরি। শিশুকে বোঝাতে হবে যে তারা “না” বলতে পারে, এমনকি যদি সেই ব্যক্তি তাদের পরিচিত হয়।
গোপনীয়তার ধারণা দেওয়া: শিশুকে বোঝানো উচিত যে তাদের শরীরের কিছু অংশ ব্যক্তিগত, এবং সেই অংশগুলোকে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। এটিকে “প্রাইভেট পার্টস” বা গোপন অংশ হিসেবে বোঝানো যেতে পারে।
বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক তৈরি করা: শিশুরা যদি অনুভব করে যে তাদের বাবা-মা তাদের প্রতি মনোযোগী এবং বিশ্বাসযোগ্য, তবে তারা যেকোনো সমস্যায় বাবা-মায়ের কাছে এসে বলবে। এই বিশ্বাসের সম্পর্ক তাদের সুরক্ষা দিতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে।
কন্যাসন্তানদের বিশেষভাবে সুরক্ষিত রাখার জন্য করণীয়
শরীরের অংশের পার্থক্য শেখানো: কন্যাসন্তানকে শরীরের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে হবে। কোন অংশ স্পর্শ করা নিরাপদ এবং কোনটি নয়, তা বোঝানোর জন্য বাবা-মায়ের উচিত সংবেদনশীল এবং সহজ ভাষায় তাদের সঙ্গে আলোচনা করা।
গোপন কথা রাখতে না বলা: শিশুকে বোঝাতে হবে, কেউ যদি তাদের খারাপ স্পর্শ করে এবং সেটা গোপন রাখতে বলে, তবে সেটি ভুল। তারা সবসময় বাবা-মাকে সবকিছু বলতে পারবে এবং বাবা-মা সবসময় তাদের পাশে থাকবে।
বিশ্বস্ততার শিক্ষা দেওয়া: শিশুকে বোঝাতে হবে, সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারো আচরণ অস্বাভাবিক বা অস্বস্তিকর মনে হলে, সেটি বলার সাহস থাকতে হবে।
কী করবেন যদি ব্যাড টাচের শিকার হয়?
শিশুর অনুভূতি গুরুত্বের সঙ্গে শুনুন: শিশুরা যদি কোনো অস্বস্তিকর স্পর্শের ব্যাপারে জানায়, তাহলে সেটা গুরুত্বের সঙ্গে শুনতে হবে। তাদের কথা বিশ্বাস করে তাদেরকে আশ্বস্ত করা জরুরি যে তারা নিরাপদ এবং বাবা-মা তাদের পাশে আছে।
যথাযথ ব্যবস্থা নিন: শিশুরা যদি ব্যাড টাচের শিকার হয়, তাহলে সেই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত এবং সামাজিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিশুদের মানসিক সাপোর্টও দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাবা-মায়ের দায়িত্ব হলো কন্যাসন্তানদের নিরাপদ রাখা এবং তাদের ভালো ও খারাপ স্পর্শের পার্থক্য শেখানো। খোলামেলা আলোচনা, শরীরের সীমানা শেখানো এবং একটি নিরাপদ সম্পর্ক তৈরি করে শিশুকে ভবিষ্যতের বিপদ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। বাবা-মায়ের দায়িত্বপূর্ণ আচরণ এবং সচেতনতা শিশুর মানসিক এবং শারীরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।