হার্ট অ্যাটাক (হৃদরোগজনিত আক্রমণ) হলো এমন একটি অবস্থা, যখন হৃৎপিণ্ডের রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে, যার ফলে হৃৎপিণ্ডের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি একটি জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সময়মতো সনাক্ত ও চিকিৎসা না হলে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তবে হার্ট অ্যাটাকের আগে শরীর কিছু সতর্ক সংকেত প্রদান করে, যা কখনও এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকলে আপনি নিজে বা অন্য কারও জীবন বাঁচাতে পারেন।
১. বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি
বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে প্রচলিত লক্ষণ। এটি অনেক সময় বুকের মাঝখানে চাপা অনুভূতি, ভারী বোঝা, বা জ্বালাপোড়া হতে পারে। এই ধরনের ব্যথা কয়েক মিনিটের জন্য স্থায়ী হতে পারে বা আসা-যাওয়া করতে পারে। অনেক সময় এই ব্যথা বাম হাত, ঘাড়, পিঠ, বা চোয়ালে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই লক্ষণ কখনও অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ এটি হৃদপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালনে সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
২. শ্বাসকষ্ট
যদি আপনার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, এবং এর সঙ্গে বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করেন, তবে এটি হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত হতে পারে। শ্বাসকষ্ট কখনোই স্বাভাবিক নয় এবং এটি হার্টে রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাতের ফলাফল হতে পারে।
৩. ঘাম
অসুস্থ বোধ না করেও হঠাৎ করে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া হার্ট অ্যাটাকের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে। ঠাণ্ডা ঘাম বা শরীর থেকে অস্বাভাবিক ঘাম পড়া মানে আপনার শরীরের ভেতরে কিছু গড়বড় হচ্ছে, এবং তা হৃদরোগের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, যদি ঘামের সঙ্গে অন্য কোনো উপসর্গ যেমন বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট থাকে, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৪. মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়ার অনুভূতি
মাথা ঘোরা বা হঠাৎ অজ্ঞান হওয়ার অনুভূতি হলে তা কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। এটি হার্টের কার্যকারিতায় সমস্যা বা হার্ট অ্যাটাকের পূর্বলক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় এই ধরনের লক্ষণ রক্তচাপের পতন বা হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাতের কারণে দেখা দেয়। যদি এমন কোনো পরিস্থিতি হয়, তাহলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
৫. পেটে ব্যথা বা বমিভাব
হার্ট অ্যাটাকের আরেকটি লক্ষণ হলো পেটে ব্যথা বা বমিভাব। যদিও এটি সাধারণত হজমের সমস্যার কারণেও হতে পারে, তবে যদি বমিভাব বা পেটে অস্বস্তি অনুভূত হয় এবং এর সঙ্গে বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট থাকে, তাহলে তা হৃদরোগের পূর্বলক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এই লক্ষণগুলো বেশি দেখা যেতে পারে।
৬. ক্লান্তি
অসাধারণ ক্লান্তি বা দুর্বলতা হার্ট অ্যাটাকের পূর্বলক্ষণ হতে পারে, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে। যদি আপনি কোনো কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত ক্লান্ত বোধ করেন বা দৈনন্দিন কাজ করতে গেলে হঠাৎ ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তাহলে তা হৃদরোগের সংকেত হতে পারে।
৭. ধড়ফড়ানি বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
হৃদস্পন্দন দ্রুত বা অনিয়মিত হয়ে পড়া এবং সেই সঙ্গে বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করা হার্ট অ্যাটাকের আগের একটি লক্ষণ হতে পারে। এটি হার্টে রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাতের কারণে ঘটতে পারে। যদি হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়, তাহলে তা কখনই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।
কখন চিকিৎসা নেওয়া জরুরি?
হার্ট অ্যাটাকের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় আমরা এই লক্ষণগুলো সাধারণ সমস্যার মতো ধরে নিই এবং তা উপেক্ষা করি, কিন্তু এটি মারাত্মক ভুল হতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি যদি নিজের বা অন্য কারও মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের কোনো লক্ষণ লক্ষ্য করেন, তাহলে দেরি না করে নিকটবর্তী হাসপাতালে যাওয়া উচিত। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিতে পারলে হার্ট অ্যাটাকের ক্ষতি থেকে বাঁচা সম্ভব।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো কখনোই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়, কারণ সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে জীবন বাঁচানো সম্ভব। বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঘাম, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং মানসিক চাপ কমানোর প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।