দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে কী হয়?

শরীরের স্বাস্থ্যের সঙ্গে প্রস্রাবের অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যদিও এ বিষয়টি অনেকেই উপেক্ষা করেন। দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা অনেকের জন্য স্বাভাবিক হলেও, এর কিছু নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে যা স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার সময় শরীরের কিছু অংশ ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে। আসুন দেখে নেওয়া যাক দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার ফলাফল এবং এর প্রভাব কী হতে পারে।

১. মূত্রথলির সম্পূর্ণ খালি না হওয়া
দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার সময় শরীরের পেশিগুলো ঠিকমতো শিথিল হয় না। এতে মূত্রথলির সম্পূর্ণ খালি হওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং প্রস্রাবের কিছু অংশ থলিতে থেকে যায়। এই সমস্যাটি দীর্ঘদিন চলতে থাকলে মূত্রনালী বা মূত্রাশয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

২. প্রস্রাবের ছিটা পড়া
দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে প্রস্রাবের ছিটা আশেপাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য একটি বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে পাবলিক টয়লেটে এটি আরও বেশি সমস্যা তৈরি করে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

৩. প্রোস্টেট সমস্যার ঝুঁকি
পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থির সঠিক কাজের জন্য প্রস্রাবের সময় পুরোপুরি বসা জরুরি। দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার ফলে প্রোস্টেটের উপর চাপ পড়তে পারে এবং প্রোস্টেটের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, যা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।

৪. ইনফেকশনের ঝুঁকি বৃদ্ধি
মূত্রথলির ভেতরে প্রস্রাব জমে থাকা বা ছিটে যাওয়া থেকে ব্যাকটেরিয়া সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে মূত্রনালীর ইনফেকশন (UTI) হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, যা একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

৫. কিডনির উপর চাপ

দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার ফলে মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি না হওয়ায় কিডনির উপরও চাপ পড়তে পারে। প্রস্রাব জমে থাকার কারণে কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হয়।

৬. মূত্রনালীর ত্রুটি
দীর্ঘদিন ধরে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার ফলে মূত্রনালীর পেশিতে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। এতে প্রস্রাবের ধারা দুর্বল হয়ে যায় এবং প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।

৭. মানসিক চাপ কমানোর সুযোগ মিস করা
বসে প্রস্রাব করা শরীরের পেশিগুলোর উপর চাপ কমায় এবং মানসিক চাপ হ্রাস করতে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বসে প্রস্রাব করা একটি আরামদায়ক অবস্থান তৈরি করে যা শরীরকে শান্ত করতে সাহায্য করে।

৮. পেটের পেশিতে সঠিক চাপ না পড়া
প্রস্রাব করার সময় পেটের পেশির সঠিক চাপ প্রয়োজন। দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে এই পেশিগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, যা পেটের মলাশয়ের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এতে হজমের সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ে।

৯. পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের সমস্যাসমূহ
দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার ফলে পাবলিক টয়লেটগুলোতে প্রস্রাবের ছিটা ছড়িয়ে যায়, যা হাইজিনের দিক থেকে একটি বড় সমস্যা তৈরি করে। এটি অপরিষ্কার পরিবেশ তৈরি করে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

১০. স্বাস্থ্যের প্রতি অসচেতনতা
দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা অনেকের জন্য একটি অভ্যাসগত কাজ, যা স্বাস্থ্যগত দিক থেকে অসচেতনতা প্রকাশ করে। বসে প্রস্রাব করার অভ্যাস স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে এবং এই ছোট্ট পরিবর্তনই দীর্ঘমেয়াদে বড় উপকার করতে পারে।

দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার চেয়ে বসে প্রস্রাব করা অনেক স্বাস্থ্যগত দিক থেকে উপকারী। এটি মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি করতে সাহায্য করে, ইনফেকশনের ঝুঁকি কমায় এবং প্রোস্টেটের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ছোট ছোট অভ্যাসের পরিবর্তনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সুস্থ থাকার জন্য দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার বদলে বসে প্রস্রাব করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *