চিৎ-ঘুম না কাত-ঘুম, শরীরের জন্য কোনটা বেশি ভালো?

প্রতিদিনের ঘুম আমাদের স্বাস্থ্যের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। ঘুমের সময় দেহের অবস্থান বা শোওয়ার ভঙ্গি শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রভাব বিস্তার করে। অনেকে চিৎ হয়ে ঘুমান, আবার অনেকেই কাত হয়ে ঘুমাতে পছন্দ করেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, কোন ভঙ্গিটি আমাদের শরীরের জন্য বেশি উপকারী? এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করবো চিৎ-ঘুম এবং কাত-ঘুমের সুবিধা ও অসুবিধা এবং কোন ভঙ্গিটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

১. চিৎ-ঘুম (বিছানায় সোজা শুয়ে ঘুমানো)

চিৎ হয়ে শোয়া মানে পিঠের উপর সোজা হয়ে ঘুমানো। অনেকের জন্য এটি স্বাভাবিক ঘুমের ভঙ্গি, যা শরীরকে সম্পূর্ণভাবে মাটির দিকে শিথিল করে রাখে।

চিৎ-ঘুমের সুবিধা:

পিঠের ব্যথা কমায়: চিৎ হয়ে শোয়া পিঠের উপর চাপ কমায় এবং মেরুদণ্ডকে সোজা রাখে, যা পিঠের ব্যথা প্রতিরোধ করতে সহায়ক।

মাথা ও ঘাড়ের সঠিক সাপোর্ট: সোজা শুয়ে থাকার কারণে মাথা এবং ঘাড়ের উপর সঠিক চাপ থাকে, যা ঘাড়ের ব্যথা এবং স্নায়ুর চাপ থেকে মুক্তি দেয়।

চুলকানির সমস্যা প্রতিরোধ: চিৎ হয়ে ঘুমালে মুখের ত্বকের কোন অংশ বালিশে চাপা পড়ে না, যার ফলে ত্বকের ক্ষতি এবং মুখে ব্রণ বা র‌্যাশ হওয়ার ঝুঁকি কমে।

চিৎ-ঘুমের অসুবিধা:

ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট: চিৎ হয়ে শোয়ার ফলে অনেকের ক্ষেত্রে ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। বিশেষ করে যারা স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগছেন তাদের জন্য চিৎ-ঘুম ক্ষতিকর হতে পারে।

ঘুমের সময় নাক ডাকা: যারা চিৎ হয়ে ঘুমান, তাদের নাক ডাকার সমস্যা বেশি দেখা দেয়। মুখে শ্বাস নেওয়ার কারণে নাক ডাকা শুরু হতে পারে।

২. কাত-ঘুম (দেহের এক পাশ ঘুরিয়ে ঘুমানো)

কাত হয়ে শোয়া মানে দেহের এক পাশ ঘুরিয়ে ঘুমানো। অনেক মানুষ এটিকে সবচেয়ে আরামদায়ক অবস্থান হিসেবে বেছে নেন, বিশেষ করে যারা রাতে মনের অস্থিরতা অনুভব করেন।

কাত-ঘুমের সুবিধা:

হজম ভালো হয়: কাত হয়ে ঘুমানোর ফলে হজমের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়, বিশেষ করে বাম পাশে কাত হয়ে শোয়া পেটের অ্যাসিড ব্যালেন্স রাখতে সাহায্য করে।

নাক ডাকা কমায়: কাত হয়ে শোয়ার ফলে নাক ডাকার সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়, কারণ শ্বাসনালী বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

প্রেগন্যান্সিতে উপকারী: গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কাত হয়ে ঘুমানো সবচেয়ে নিরাপদ এবং আরামদায়ক ভঙ্গি, কারণ এটি গর্ভের শিশুর জন্য সঠিক রক্ত চলাচল বজায় রাখে।

কাত-ঘুমের অসুবিধা:

মুখের ত্বকের ক্ষতি: কাত হয়ে ঘুমানোর সময় মুখের এক পাশ বালিশে চাপা পড়ে থাকে, যা ত্বকে বলিরেখা সৃষ্টি করতে পারে এবং মুখের চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কাঁধের ব্যথা: দীর্ঘ সময় ধরে এক পাশ ঘুরিয়ে শোয়ার ফলে কাঁধে ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে যারা এক পাশের উপর অনেকক্ষণ শুয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি হয়।

৩. কোন ভঙ্গিটি সবচেয়ে ভালো?

প্রতিটি ঘুমের ভঙ্গিরই কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কাত হয়ে ঘুমানো শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী, বিশেষত বাম পাশে কাত হয়ে ঘুমালে হজম ভালো হয়, হার্টের সঠিক কার্যকারিতা বজায় থাকে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে। এছাড়াও, এটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিরাপদ। অন্যদিকে, যারা ঘাড় ও পিঠের ব্যথায় ভুগছেন তাদের জন্য চিৎ হয়ে শোয়া সঠিক সমাধান হতে পারে।

চিৎ-ঘুম এবং কাত-ঘুমের মধ্যে কোন ভঙ্গিটি বেশি ভালো তা নির্ভর করে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা এবং আরামের উপর। শরীরের পেশির চাপ কমানো, হজম ভালো রাখা এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার জন্য কাত হয়ে ঘুমানো বেশি উপকারী হলেও, পিঠের ব্যথা বা ঘাড়ের সমস্যা থাকলে চিৎ হয়ে ঘুমানো শ্রেয়। তাই নিজের শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ঘুমের ভঙ্গি বেছে নেওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *