মরিচ খেলে ঝাল লাগে কেন? কী কারণে খাবার ঝাল হয়?

মরিচ বা ঝালযুক্ত খাবার খেলে যে তীব্র ঝালের অনুভূতি হয়, তা আমাদের অনেকের কাছে পরিচিত এবং প্রিয়। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন, কেন মরিচ খেলে এত ঝাল লাগে? এর পেছনে রয়েছে এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান ও বিশেষ বৈজ্ঞানিক কারণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক মরিচের ঝালের কারণ এবং কীভাবে খাবার ঝাল হয়।

১. ক্যাপসাইসিন: ঝালের মূল উৎস
মরিচ খাওয়ার পর যে ঝাল অনুভূতি হয়, তার মূল কারণ হলো ক্যাপসাইসিন (Capsaicin)। এটি মরিচে উপস্থিত একটি প্রাকৃতিক রাসায়নিক যৌগ। ক্যাপসাইসিন মুখের সংবেদনশীল নার্ভগুলোকে উদ্দীপিত করে এবং আমাদের ত্বকের তাপ অনুভূতির রিসেপ্টরের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে। ফলে, মস্তিষ্ক সেই উদ্দীপনাকে “ঝাল” হিসেবে ব্যাখ্যা করে, যদিও আসলে কোনো তাপমাত্রা বাড়ে না।

২. TRPV1 রিসেপ্টরের প্রতিক্রিয়া
ক্যাপসাইসিন মুখের ত্বকে থাকা TRPV1 নামক রিসেপ্টরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। এই রিসেপ্টর সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রা বা ব্যথার প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য সক্রিয় হয়। ক্যাপসাইসিনের প্রভাবে এই রিসেপ্টর তীব্র উত্তাপের প্রতিক্রিয়া জানায়, ফলে আমাদের মস্তিষ্কে ঝাল অনুভূতির সৃষ্টি হয়।

৩. স্কোভিল স্কেল: ঝালের মাত্রা নির্ধারণ
মরিচের ঝালের তীব্রতা নির্ধারণ করতে স্কোভিল হিট ইউনিট (Scoville Heat Unit – SHU) ব্যবহার করা হয়। এই স্কেলে ক্যাপসাইসিনের পরিমাণ অনুযায়ী ঝালের মাত্রা মাপা হয়। সাধারণ মরিচের ঝাল ১,০০০-৫,০০০ SHU হতে পারে, কিন্তু ক্যারোলিনা রিপারের মতো কিছু মরিচের ঝাল প্রায় ২ মিলিয়ন SHU পর্যন্ত হতে পারে।

৪. ঝাল খাওয়ার সময় শরীরের প্রতিক্রিয়া
মরিচ বা ঝালযুক্ত খাবার খাওয়ার সময় শরীরে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যেমন:

ঘাম হওয়া: ঝাল খাওয়ার ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, যার ফলে ঘাম হয়।
নাক দিয়ে পানি পড়া: ঝাল খাওয়ার কারণে নাকের ঝিল্লি উত্তেজিত হয়, যার কারণে নাক দিয়ে পানি পড়ে।
মুখে জ্বালাপোড়া: ক্যাপসাইসিনের প্রভাবে মুখে জ্বলন্ত অনুভূতি হতে পারে।
পেটে সমস্যা: অতিরিক্ত ঝাল খেলে পেটের সমস্যা, যেমন গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সম্ভাবনাও থাকে।

৫. খাবারে ঝাল ব্যবহারের কারণ
ঝাল শুধুমাত্র খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্যই ব্যবহৃত হয় না, এর রয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব। যেমন:

স্বাদের বৈচিত্র্য: ঝাল খাবার অন্যান্য উপাদানের স্বাদকে আরও তীব্র এবং আকর্ষণীয় করে তোলে।
সংরক্ষণ: ক্যাপসাইসিন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে কাজ করে, যা খাবার সংরক্ষণে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্যগত উপকার: ক্যাপসাইসিনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক গুণ রয়েছে, যা হার্টের সমস্যা, ক্যান্সার প্রতিরোধ ও ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে।

৬. ঝাল কমানোর উপায়
ঝাল খাওয়ার পর মুখে জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য কিছু উপায় রয়েছে:

ঠান্ডা দুধ পান করা: দুধের কেসিন নামক প্রোটিন ক্যাপসাইসিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঝাল কমাতে সাহায্য করে।
চিনি বা মধু: ক্যাপসাইসিনের প্রভাব কমাতে চিনি বা মধু কার্যকর।
দই বা টক খাবার: ক্যাপসাইসিনের তীব্রতা কমাতে দই বা লেবুর রস বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।

মরিচ খেলে ঝালের কারণ হলো ক্যাপসাইসিন, যা মুখের সংবেদনশীল রিসেপ্টরকে উদ্দীপিত করে এবং মস্তিষ্ককে ঝাল অনুভূতি পাঠায়। যদিও ঝাল খাওয়ার অভিজ্ঞতা তীব্র হতে পারে, এটি স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি আমাদের শরীরের জন্য উপকারীও হতে পারে। তাই ঝাল খাবার খাওয়ার সময় অবশ্যই তার পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা উচিত এবং প্রয়োজনে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ঝালের তীব্রতা কমাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *