ইন্টারনেট বর্তমানে শিক্ষা ও বিনোদনের অন্যতম প্রধান উৎস। তবে এটি শিশুদের জন্য যেমন উপকারী, তেমনই বিপদজনক হতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত ও অসচেতন ইন্টারনেট ব্যবহার শিশুকে মানসিক ও শারীরিক নানা ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। নিম্নে কিছু বিপদের কথা তুলে ধরা হলো যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সন্তানের জীবনে আসতে পারে।
১. অনলাইন বুলিং (Cyberbullying)
অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে বুলিং বা অপমানজনক মন্তব্যের শিকার হওয়া একটি বড় সমস্যা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা গেমিং সাইটে বুলিংয়ের শিকার হয়ে সন্তান হতাশায় ভুগতে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
২. অপব্যবহার ও আসক্তি
অতিরিক্ত সময় ইন্টারনেট ব্যবহার শিশুরা সহজেই ভিডিও গেম, সোশ্যাল মিডিয়া, বা অনলাইন চ্যাটে আসক্ত হয়ে পড়তে পারে। এই আসক্তি দৈনন্দিন কাজ, পড়াশোনা, এবং সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করে এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. অনিরাপদ কনটেন্ট
ইন্টারনেটে অশ্লীল বা সহিংস কনটেন্ট সহজেই পাওয়া যায়। শিশুরা অবচেতনভাবে বা কৌতূহল থেকে এইসব কনটেন্টে প্রবেশ করতে পারে, যা তাদের মানসিক এবং নৈতিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৪. ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার
অনেক শিশু না বুঝেই নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি বা ভিডিও শেয়ার করে ফেলে। এর ফলে সাইবার ক্রিমিনালরা সেই তথ্য চুরি বা অপব্যবহার করতে পারে, যা পরিচয় চুরি (Identity Theft) বা ফিশিং আক্রমণ সহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
৫. অনলাইন শিকারি (Online Predators)
ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপরিচিত ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্বের মাধ্যমে সন্তানের জীবন বিপদে পড়তে পারে। অনলাইন শিকারিরা বিভিন্ন সাইটে কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করে এবং তাদের ফাঁদে ফেলে, যা পরবর্তীতে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
৬. সোশ্যাল মিডিয়া ও আত্মমর্যাদার সংকট
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সন্তান অন্যদের সাফল্য বা সৌন্দর্যের সাথে নিজেদের তুলনা করতে শুরু করে, যা আত্মমর্যাদার সংকট তৈরি করতে পারে। কম আত্মবিশ্বাস, হীনমন্যতা এবং হতাশা এর ফলে বাড়তে পারে।
৭. ভুয়া তথ্য ও মিথ্যা খবর
ইন্টারনেটে ভুয়া তথ্য ও মিথ্যা খবরের প্রভাবও অনেক বড়। শিশুরা এসব ভুল তথ্য গ্রহণ করে ভুল শিক্ষা পেতে পারে, যা তাদের জীবনদর্শনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৮. আর্থিক প্রতারণা
ইন্টারনেটে অর্থনৈতিক প্রতারণা একটি সাধারণ সমস্যা। অনলাইনে গেমিং বা শপিংয়ের সময়, শিশুরা সহজেই প্রতারণার শিকার হতে পারে, যেখানে তাদের ব্যক্তিগত বা অর্থনৈতিক তথ্য চুরি করা হয়।
কিভাবে আপনার সন্তানকে নিরাপদ রাখা যায়?
সচেতনতা বৃদ্ধি করুন: সন্তানকে ইন্টারনেটের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করুন। তাদের সাথে নিয়মিত আলোচনা করুন অনলাইন ঝুঁকি সম্পর্কে।
প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার করুন: বিভিন্ন প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সফটওয়্যার ব্যবহার করে তাদের অনলাইন কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করুন এবং অনুপযুক্ত সাইটগুলো ব্লক করুন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা শেখান: সন্তানকে শেখান কীভাবে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং অপরিচিতদের সাথে অনলাইন বন্ধুত্ব করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় নির্ধারণ করুন: তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় সীমা নির্ধারণ করুন এবং সেই সময়ে তাদের উপযুক্ত কনটেন্টে মনোনিবেশ করতে উৎসাহিত করুন।
স্মার্টফোন ও কম্পিউটার নিয়মিত চেক করুন: সন্তান কীভাবে এবং কোথায় ইন্টারনেট ব্যবহার করছে তা নিয়মিত চেক করুন।
ইন্টারনেট যেমন শিক্ষার উৎস, তেমনই বিপদের উৎসও হতে পারে যদি এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ না করা হয়। সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর অভিভাবকের নজরদারি এবং সচেতনতা থাকলে এই ঝুঁকিগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।