ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা দূর করতে কী করা যায়?

ঢাকা শহরে বৃষ্টির সময় প্রায়ই জলাবদ্ধতার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ সমস্যা যানজট, জলবাহিত রোগ এবং জীবনের মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

১. নর্দমা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন
ঢাকার অনেক এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত এবং সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষিত নয়। ড্রেনগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার করা ও যথাযথভাবে পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা তৈরি করা জরুরি। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করা হলে জলাবদ্ধতা কমানো সম্ভব হবে।

২. প্লাবনপ্রবণ এলাকায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা
বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে, বিশেষত প্লাবনপ্রবণ এলাকাগুলোতে। “রেইনওয়াটার হারভেস্টিং” প্রযুক্তির মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করে তা ভূগর্ভস্থ রিচার্জের মাধ্যমে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ফলে ড্রেনেজ ব্যবস্থার ওপর চাপ কমবে এবং জলাবদ্ধতা হ্রাস পাবে।

৩. খাল পুনরুদ্ধার ও পুনরায় খনন
ঢাকার বেশ কয়েকটি খাল অতীতে জল নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। বর্তমানে অনেক খাল দখল হয়ে গেছে বা অবহেলায় পরিণত হয়েছে। এই খালগুলো পুনরুদ্ধার ও পুনরায় খনন করা হলে পানি নিষ্কাশনের কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং জলাবদ্ধতা কমবে।

৪. অবৈধ দখল ও নির্মাণ রোধ
নগরীতে খাল ও ড্রেনের ওপর অবৈধ নির্মাণ ও দখল জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। এসব নির্মাণ অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে এবং খাল ও ড্রেনগুলোতে পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে।

৫. পরিকল্পিত নগরায়ণ
ঢাকা শহরের অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণের ফলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিকল্পিত নগরায়ণ বাস্তবায়ন করে শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা সম্ভব। ভবিষ্যতে নতুন আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সময় ড্রেনেজের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।

৬. সবুজায়ন বৃদ্ধি করা
ঢাকায় সবুজ এলাকা হ্রাস পাওয়া একটি বড় সমস্যা। বৃক্ষরোপণ ও সবুজায়ন বাড়ানো হলে, মাটির পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, যা জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে সহায়ক হবে।

৭. প্লাস্টিক ও বর্জ্য নিষ্কাশন নিয়ন্ত্রণ
প্লাস্টিক বর্জ্য ও অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা ড্রেনগুলো বন্ধ করে দেয়, ফলে পানি জমে থাকে। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জনসাধারণকে প্লাস্টিক ও বর্জ্য যথাযথভাবে নিষ্পত্তির জন্য উৎসাহিত করতে হবে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে।

৮. স্থায়ী পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন
স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। উন্নত ইনফ্রাস্ট্রাকচার, যেমন আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম, পানির গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ও পানির রিসাইক্লিং ব্যবস্থা গড়ে তুললে জলাবদ্ধতা কমানো সম্ভব।

৯. জনসচেতনতা বৃদ্ধি
সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। নাগরিকরা যদি ময়লা-আবর্জনা যথাযথ স্থানে ফেলেন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা অবরুদ্ধ না করেন, তবে জলাবদ্ধতা কমবে।

১০. নগর কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু মনিটরিং
নগর কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু মনিটরিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও সময়মতো মেরামত নিশ্চিত করা হলে জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের জন্য সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। নর্দমা ও খালের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, এবং নগরায়ণে পরিকল্পিতভাবে জল নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি করা হলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *