তোকমা এবং চিয়াসিড, এই দুটি ছোট বীজ আমাদের খাদ্যাভ্যাসে আজকাল ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। উভয়েরই রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ এবং শরীরের জন্য অসাধারণ উপকারিতা। এরা আমাদের পেটের হজম থেকে শুরু করে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—গুণাগুণের বিচারে কোনটি সেরা? চলুন, তোকমা ও চিয়াসিডের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো পর্যালোচনা করে জেনে নিই কোনটি আপনাকে বেশি উপকার করতে পারে।
তোকমা
তোকমা, যাকে ‘সুইট বেসিল সিডস’ নামেও ডাকা হয়, সাধারণত এশিয়ায় মিষ্টি পানীয় এবং বিভিন্ন ডেজার্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত তুলসী গাছের বীজ। এই বীজগুলি পানির সঙ্গে মিশে আঠালো, জেলির মতো আকার ধারণ করে এবং অনেক সময় শরবতের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়।
তোকমার গুণাগুণ:
ওজন কমাতে সহায়ক: তোকমা বীজ পেট ভরানোর জন্য বেশ কার্যকরী। এটি পানিতে মিশে ফুলে ওঠে, ফলে খাওয়ার পর অনেকক্ষণ পেট ভর্তি মনে হয়। ফলে ক্ষুধা কম লাগে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
হজমশক্তি উন্নত করে: তোকমা বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: তোকমা বীজে থাকা পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।
শরীর ঠাণ্ডা রাখে: গরমের দিনে তোকমা বীজ শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সহায়ক। এটি ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে পারে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ত্বক ও চুলের যত্নে উপকারী: তোকমা বীজে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
চিয়াসিড
চিয়াসিড মূলত দক্ষিণ আমেরিকার একটি সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। এটি মায়ান সভ্যতায় “শক্তির উৎস” হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ছোট এবং কালো বীজ হলেও চিয়াসিডে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টি উপাদান, যা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়ক।
চিয়াসিডের গুণাগুণ:
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস: চিয়াসিডে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। এটি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে।
প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস: চিয়াসিডে উচ্চমাত্রার প্রোটিন রয়েছে, যা পেশি বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং মেটাবলিজমের উন্নতি ঘটায়। যারা মাংস খান না বা কম খান, তাদের জন্য চিয়াসিড একটি দুর্দান্ত প্রোটিনের বিকল্প হতে পারে।
ওজন কমাতে কার্যকর: চিয়াসিডও পানিতে মিশলে ফুলে ওঠে এবং একটি জেলির মতো আকার ধারণ করে। ফলে এটি পেট অনেকক্ষণ ভরা রাখে, যা ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
ফাইবারের উচ্চমাত্রা: চিয়াসিডে প্রচুর ফাইবার রয়েছে, যা হজমশক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক। ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: চিয়াসিডের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
তুলনামূলক বিশ্লেষণ
তোকমা এবং চিয়াসিড উভয়েরই অনেক পুষ্টিগুণ আছে। তবে, কিছু বিশেষ দিক থেকে চিয়াসিড কিছুটা এগিয়ে থাকতে পারে। বিশেষ করে, চিয়াসিডে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিনের উপস্থিতি এটি হার্ট এবং পেশির স্বাস্থ্যের জন্য অতুলনীয় করে তুলেছে। এছাড়া, এটি ফাইবারের উচ্চমাত্রায় শরীরের হজমক্রিয়া উন্নত করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
অন্যদিকে, তোকমা ত্বক ও চুলের যত্নে বেশি উপকারী হতে পারে, কারণ এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি। তোকমা বীজে ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের উপস্থিতি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।
কোনটি বেছে নেবেন?
আপনার নির্দিষ্ট পুষ্টিগত প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি তোকমা বা চিয়াসিড বেছে নিতে পারেন। যদি আপনার লক্ষ্য হয় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ, তবে চিয়াসিড আপনার জন্য সেরা। অন্যদিকে, যদি আপনার লক্ষ্য হজমের উন্নতি, ত্বক এবং চুলের যত্ন, এবং শরীর ঠাণ্ডা রাখা হয়, তবে তোকমা বীজ বেছে নিতে পারেন।
তোকমা এবং চিয়াসিড উভয়ই তাদের নিজস্ব পুষ্টিগুণে অনন্য। আপনি যদি স্বাস্থ্যসচেতন হন এবং আপনার খাদ্যাভ্যাসে পুষ্টির সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে চান, তবে এ দুটি বীজই হতে পারে আপনার জন্য চমৎকার সংযোজন। তবে আপনার শরীরের প্রয়োজন বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।