শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেক বাবা-মায়ের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা হলো কৃমি। এটি শিশুদের মধ্যে খুবই সাধারণ এবং প্রায়শই ঘটে থাকে, বিশেষ করে যখন তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলে না বা মাটি বা খেলনার মাধ্যমে জীবাণুর সংস্পর্শে আসে। তবে, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে কৃমির সমস্যা সমাধান করা সহজ।
কৃমি কীভাবে হয়?
কৃমি সাধারণত গৃহপালিত এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে। মাটি, দূষিত পানি, এবং অপরিচ্ছন্ন খাবার কৃমির অন্যতম উৎস। কৃমির ডিম ছোট আকারের এবং সহজে দেখা যায় না, তাই খেলনা, মাটি বা অপরিষ্কার হাতের মাধ্যমে তা শিশুর শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
শিশুর কৃমির লক্ষণসমূহ:
শিশুর মধ্যে কৃমির উপস্থিতি বোঝার কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে, যা দেখে বাবা-মা সহজেই অনুমান করতে পারেন যে শিশুটি কৃমিতে আক্রান্ত হয়েছে। নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন:
পেটব্যথা: শিশুরা হঠাৎ করে পেটব্যথার অভিযোগ করতে পারে। এটি কৃমির অন্যতম লক্ষণ।
অতিরিক্ত ক্ষুধা বা ক্ষুধামন্দা: কৃমি আক্রান্ত হলে শিশুর খাওয়ার ইচ্ছা কমে যেতে পারে, বা কখনো কখনো অতিরিক্ত ক্ষুধার্ত হতে পারে।
মলদ্বারে চুলকানি: কৃমির কারণে শিশুর মলদ্বারে চুলকানি হয়, বিশেষ করে রাতে।
ওজন কমে যাওয়া: শিশুর ওজন হঠাৎ করে কমে যেতে পারে কারণ কৃমি শরীরের খাদ্য শোষণ করে ফেলে।
বমি বা মলমূত্রে কৃমি: মাঝে মাঝে শিশুর মলে বা বমিতে কৃমি দেখা যায়।
উচ্চমাত্রার ক্লান্তি: কৃমি আক্রান্ত শিশুরা প্রায়ই ক্লান্ত বা দুর্বল বোধ করে।
ঘুমের সমস্যা: কৃমির কারণে শিশুর রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং তারা বারবার ঘুম থেকে উঠে।
কৃমি প্রতিরোধের উপায়:
কৃমি প্রতিরোধের জন্য কিছু সহজ কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এগুলো শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষা করতে এবং কৃমির সংক্রমণ রোধে সহায়ক হতে পারে।
হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা: শিশুকে বাইরে থেকে আসার পর, খাওয়ার আগে, এবং টয়লেট ব্যবহারের পর নিয়মিতভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
খাবার পরিষ্কার করে খাওয়া: শিশুর খাবার ভালোভাবে ধুয়ে এবং রান্না করে খাওয়ানো উচিত। কাঁচা বা অপরিচ্ছন্ন খাবার কখনোই খাওয়ানো ঠিক নয়।
নখ ছোট রাখা: শিশুর নখ ছোট রাখা উচিত যাতে কৃমির ডিম বা ময়লা নখের নিচে জমতে না পারে।
পানি ফুটিয়ে পান করা: শিশুকে সবসময় পরিষ্কার এবং ফুটানো পানি পান করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। দূষিত পানিতে কৃমির উপস্থিতি থাকে, যা শিশুর শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
মাটি থেকে দূরে রাখা: মাটিতে খেলার সময় শিশুর যত্ন নিন এবং খেলার পর তাকে সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
খেলনা এবং কাপড় পরিষ্কার রাখা: শিশুর ব্যবহৃত খেলনা, কাপড় এবং বিছানার চাদর নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি। কারণ এগুলোর মাধ্যমে কৃমি ছড়াতে পারে।
ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ: যদি শিশুর মধ্যে কৃমির লক্ষণ দেখা যায়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কৃমির জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করা উচিত। সাধারণত ডাক্তার ৬ মাস পরপর কৃমির ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন।
কৃমি হলে করণীয়:
শিশুর কৃমির লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। শিশুর শরীরে কৃমি থাকলে তারা শরীর থেকে পুষ্টি শোষণ করে, যা শিশুর বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিন:
ডাক্তারের পরামর্শে কৃমির ওষুধ সেবন: শিশুর কৃমি হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ওষুধ খাওয়ানো প্রয়োজন। কিছু ওষুধ একক ডোজে কাজ করে, আবার কিছু ওষুধ কয়েক দিন ধরে খাওয়াতে হতে পারে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: শিশুর ঘর, বিছানা এবং কাপড় সবসময় পরিষ্কার রাখা জরুরি। এতে করে পুনরায় কৃমির আক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
শিশুর শরীরে কৃমির সমস্যা স্বাভাবিক হলেও তা অবহেলা করা উচিত নয়। শিশুর মধ্যে কৃমির লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করুন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সঠিক সময়ে ওষুধ খাওয়ানো কৃমি প্রতিরোধের অন্যতম কার্যকরী উপায়।