হঠাৎ কোনো একটি নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার ইচ্ছা হয় কেন?

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক সময় আসে যখন হঠাৎ করে কোনো একটি নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি তীব্র আকর্ষণ বা খাওয়ার ইচ্ছা জাগে। কোনো দিন হয়তো আচমকাই মিষ্টি বা ঝাল কিছু খেতে মন চাইতে পারে, আবার কোনো সময় নির্দিষ্ট এক ধরনের ফল বা খাবারের জন্য মন ছটফট করতে পারে। সাধারণত এই ইচ্ছাকে বলে ফুড ক্রেভিং বা খাবারের প্রতি আকর্ষণ। তবে এর পেছনে শারীরিক ও মানসিক অনেকগুলো কারণ কাজ করে। আসুন জেনে নিই, কেন এমন ইচ্ছা হয় এবং এর পেছনের কারণগুলো কী।

নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার ইচ্ছার কারণসমূহ

পুষ্টির ঘাটতি: আমাদের শরীর প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন করে। শরীর যখন কোনো একটি নির্দিষ্ট পুষ্টির অভাব অনুভব করে, তখন সেই পুষ্টির উৎস হিসেবে নির্দিষ্ট কোনো খাবারের প্রতি আকর্ষণ জাগে। যেমন, শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলে দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়তে পারে, আর সোডিয়ামের ঘাটতি হলে লবণাক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছা হতে পারে।

হরমোনের পরিবর্তন: বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে হরমোনের ওঠানামা খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে পারে। যেমন, মাসিক চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে, গর্ভাবস্থায় বা মেনোপজের সময় হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তন হয়, যা খাবারের ইচ্ছাকে প্রভাবিত করে। এই সময় মিষ্টি, চকলেট বা ঝাল জাতীয় খাবার খাওয়ার ইচ্ছা বাড়তে পারে।

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ: যখন আমরা উদ্বিগ্ন বা মানসিক চাপে থাকি, তখন মস্তিষ্কের করটিসল নামক হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এর ফলে আমাদের শরীর দ্রুত শক্তি খুঁজতে থাকে এবং আমরা কার্বোহাইড্রেট, চিনি বা চর্বি যুক্ত খাবারের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হই। এই ধরনের খাবার কিছু সময়ের জন্য মানসিক শান্তি এনে দেয়, যদিও তা সাময়িক।

ঘুমের অভাব: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আমাদের শরীরে ঘ্রেলিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ক্ষুধা বাড়ায়। ঘুমের অভাবের ফলে বিশেষ করে মিষ্টি ও কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া ঘুম কম হলে শরীরে শক্তির ঘাটতি দেখা দেয়, যা থেকে চটজলদি শক্তির উৎস হিসেবে উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছা জন্মায়।

আবেগের সঙ্গে সম্পর্ক: অনেক সময় খাবারের সঙ্গে আমাদের আবেগের যোগসূত্র থাকে। ছোটবেলায় মা বা দাদীর রান্না করা কোনো বিশেষ খাবার বা উৎসবের সঙ্গে জড়িত কোনো খাবার খাওয়ার ইচ্ছা থাকতে পারে। এটি মূলত আবেগ এবং স্মৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত।

বিরক্তি বা একঘেয়েমি: অনেক সময় একঘেয়েমি থেকে খাবারের প্রতি আকর্ষণ জন্মায়। যখন আমরা কোনো কাজে নিযুক্ত থাকি না বা মনোযোগ অন্য কিছুতে থাকে না, তখন অপ্রয়োজনীয়ভাবে খাবার খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।

খাদ্য বিজ্ঞাপনের প্রভাব: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা টিভিতে আকর্ষণীয় খাদ্য বিজ্ঞাপন আমাদের খাবারের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা সুস্বাদু খাবার দেখে আমাদের মন স্বাভাবিকভাবেই সেই খাবার খাওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

হাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা: অনেক সময় শরীরে পানির ঘাটতির কারণে ক্ষুধার অনুভূতি হতে পারে। শরীরের পানির অভাবকে মস্তিষ্ক ক্ষুধা হিসেবে ব্যাখ্যা করতে পারে এবং এর ফলে খাবারের ইচ্ছা তৈরি হয়।

নির্দিষ্ট খাবারের ইচ্ছা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?

সুষম খাদ্য গ্রহণ: পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন যাতে শরীরে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান পৌঁছে যায়। এতে খাবারের ইচ্ছা কমে আসতে পারে।

প্রচুর পানি পান: পানি শরীরে পর্যাপ্ত থাকলে খাবারের প্রতি অপ্রয়োজনীয় আকর্ষণ কমতে পারে। বিশেষ করে খাবারের ইচ্ছা হলে প্রথমে এক গ্লাস পানি পান করতে পারেন।

ঘুমের প্রতি যত্নশীল হন: পর্যাপ্ত এবং নিয়মিত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা হবে এবং খাবারের আকাঙ্ক্ষা কমে যাবে।

মনোযোগ সরিয়ে নিন: যখনই কোনো খাবার খাওয়ার ইচ্ছা প্রবল হয়, তখন নিজেকে অন্য কিছু কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। এটি আপনাকে সেই ইচ্ছা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করবে।

মানসিক চাপ কমান: স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের জন্য মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করুন, যা মানসিক চাপ কমিয়ে খাবারের ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি আকর্ষণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এর পেছনে পুষ্টির ঘাটতি, মানসিক চাপ, হরমোনের পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণ কাজ করে। এসব ইচ্ছা কখনো কখনো শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে, আবার কিছু সময় মন বা আবেগের চাহিদার কারণেও এমন হতে পারে। তবে সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এসব আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *