গণপরিবহন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। বিশেষ করে বাস ও ট্রেনে যাতায়াত করা বহু মানুষের নিত্য অভ্যাস। কিন্তু এই যাত্রাপথে কিছু মানুষের আচরণ অন্য যাত্রীদের বিরক্তি বা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাত্রীদের কিছু সাধারণ আচরণ অনেক সময় অশান্তি সৃষ্টি করে এবং পরিবহনের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করে। আসুন জেনে নিই সেইসব সাধারণ আচরণগুলো যা বাসে বা ট্রেনে অন্যদের বিরক্তির কারণ হয়ে থাকে:
১. আবশ্যক নয় এমন জোরে কথা বলা
বাস বা ট্রেনে ফোনে জোরে কথা বলা বা একে অপরের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলা যাত্রীদের বিরক্তির অন্যতম প্রধান কারণ। এই আচরণে আশেপাশের যাত্রীরা অস্বস্তি বোধ করেন। বিশেষ করে যখন লোকজন ব্যক্তিগত কথাবার্তা বা তুচ্ছ বিষয়ে অতিরিক্ত জোরে কথা বলেন, তখন তা অন্যদের মনোযোগ বিঘ্নিত করে।
২. সিট দখল করা ও বসার নিয়ম লঙ্ঘন
বাস বা ট্রেনের আসন সংখ্যা সীমিত। তবে অনেকেই সিটের উপর অতিরিক্ত জিনিসপত্র রাখেন বা একাধিক সিট দখল করে বসে থাকেন, যা অন্যদের বসার জন্য সমস্যা তৈরি করে। বিশেষত, বাসে বা ট্রেনে যদি ভিড় থাকে, তখন এই ধরনের আচরণ অন্যদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৩. অপ্রয়োজনীয়ভাবে দরজা বা জানালায় দাঁড়িয়ে থাকা
অনেকেই বাস বা ট্রেনে দরজা বা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন, যা অন্য যাত্রীদের ওঠা-নামা করতে অসুবিধা সৃষ্টি করে। অনেক সময় তাড়াহুড়ো করা যাত্রীদের নামতে বা উঠতে বাধা দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, যা যাত্রীদের জন্য অস্বস্তিকর ও বিরক্তিকর হয়ে ওঠে।
৪. জোরে গান শোনা বা ভিডিও দেখা
কানে হেডফোন না লাগিয়ে বাস বা ট্রেনে মোবাইলে জোরে গান শোনা বা ভিডিও দেখাও একটি বড় সমস্যা। এই আচরণে অন্য যাত্রীদের শান্তি বিঘ্নিত হয় এবং কেউ কেউ পড়াশোনা বা কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন না। এই ধরনের অশোভন আচরণ সহজেই বিরক্তির জন্ম দেয়।
৫. খোলা মুখে খাবার খাওয়া বা খাওয়ার পর পরিষ্কার না রাখা
গণপরিবহনে খাওয়াদাওয়া করার সময় কেউ যদি খাবারের গন্ধ বা সাউন্ড সহ্য করতে না পারেন, তাহলে তা অস্বস্তির সৃষ্টি করে। পাশাপাশি, খাবারের প্যাকেট বা বর্জ্য সিটে বা মেঝেতে ফেলে রাখাও পরিবেশ নষ্ট করে এবং অন্যদের বিরক্তি বাড়ায়।
৬. অশ্লীল বা অভদ্র ভাষা ব্যবহার
যানবাহনে অশ্লীল বা অভদ্র ভাষা ব্যবহার করা অত্যন্ত বিরক্তিকর একটি অভ্যাস। এটা শুধু যাত্রাপথের সৌন্দর্য নষ্ট করে না, বরং পারিপার্শ্বিক পরিবেশও অস্বস্তিকর করে তোলে। বিশেষ করে শিশু এবং নারীদের উপস্থিতিতে এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করা অত্যন্ত অগ্রহণযোগ্য।
৭. অনধিকার চর্চা বা জবরদস্তি কথা বলা
অনেক সময় যাত্রীরা একে অপরের ব্যক্তিগত বিষয়ে বেশি কৌতূহল দেখান বা জোর করে কথা বলতে শুরু করেন, যা অন্যদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। কেউ চাইলে নিজের ব্যক্তিগত জগতে থাকতে পারেন, এবং জোর করে কথা বলার মাধ্যমে সেই জগতে প্রবেশ করা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ।
৮. দূষণ তৈরি করা বা অপরিচ্ছন্ন আচরণ
বাসে বা ট্রেনে থুতু ফেলা, বর্জ্য ফেলানো বা জানালার বাইরে কিছু ফেলা এমন কিছু আচরণ যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং অন্য যাত্রীদের মধ্যে বিরক্তির সৃষ্টি করে। এছাড়া, অপ্রয়োজনীয়ভাবে সিটে জিনিসপত্র রেখে অপরিষ্কার পরিবেশ তৈরি করাও একটি বড় সমস্যা।
৯. শিশুদের উপর নিয়ন্ত্রণ না রাখা
যাত্রাপথে শিশুদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। অনেক সময় বাচ্চারা অতিরিক্ত শব্দ করে, সিটে লাফায় বা অন্য যাত্রীদের বিরক্ত করে, যা অন্যদের জন্য অসুবিধার কারণ হতে পারে। বাবা-মায়েদের উচিত শিশুদের ঠিকমত সামলানো।
১০. নিজের জায়গার বাইরে পা রাখা বা হাত রাখা
কিছু যাত্রী তাঁদের পা সিটে রাখেন বা অন্যের সিটে হাত রাখেন, যা অন্যদের ব্যক্তিগত জায়গায় প্রবেশ করে এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করে। এমনকি কখনও কখনও পা ছড়িয়ে সিটে শোয়া পর্যন্ত দেখা যায়, যা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত অসহ্যকর।
বাস বা ট্রেনে আমাদের যাত্রা সুখময় করার দায়িত্ব সবার। যাত্রাপথে যদি আমরা একটু সচেতন হই এবং অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি, তবে সহজেই এই যাত্রাটি আনন্দময় করা সম্ভব।