দাঁতে কি সত্যিই পোকা হয়?

বেশিরভাগ মানুষ ছোটবেলা থেকেই বিশ্বাস করে যে দাঁতের ক্ষয় বা ব্যথার কারণ হলো ‘দাঁতের পোকা’। মূলত, এটি প্রাচীনকালের একটি ভ্রান্ত ধারণা যা আজও প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান দাঁতের এই সমস্যার ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়। আসলে, দাঁতে কোনো পোকা হয় না। দাঁতের সমস্যাগুলোর পেছনে রয়েছে নির্দিষ্ট কারণ এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

দাঁতে ‘পোকা’ ধারণার উৎস

‘দাঁতের পোকা’ ধারণাটি বহু প্রাচীন। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতিতে দাঁতের ব্যথা বা ক্ষয়কে ‘পোকা’র আক্রমণের ফলাফল হিসেবে ধরা হতো। প্রাচীন মিশর, চীন, ভারতসহ বহু সংস্কৃতিতে মানুষ বিশ্বাস করত যে দাঁতের ভেতরে এক ধরনের পোকা বাস করে, যা দাঁত খেয়ে ফেলে এবং এর ফলে দাঁত ক্ষয় হয় ও ব্যথা শুরু হয়।

এক সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বা হাতুড়ে চিকিৎসক দাঁতের মধ্য থেকে পোকা বের করে আনার অভিনয় করতেন। এই ধরনের কর্মকাণ্ড মানুষকে বিভ্রান্ত করত। তবে সত্য হলো, দাঁতে কখনোই পোকা হয় না। দাঁতের ক্ষয় আসলে ডেন্টাল ক্যারিজ বা দন্তক্ষয় নামে পরিচিত, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।

দাঁতের ক্ষয় ও ক্যাভিটির প্রকৃত কারণ

আধুনিক বিজ্ঞান জানায়, দাঁতের ক্ষয়ের পেছনে কোনো পোকা নয়, বরং ব্যাকটেরিয়া দায়ী। যখন আমরা চিনি বা স্টার্চ সমৃদ্ধ খাবার খাই, তখন মুখের ব্যাকটেরিয়া এগুলোকে ভেঙে অ্যাসিড তৈরি করে। এই অ্যাসিড দাঁতের এনামেলকে ধ্বংস করতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে ক্যাভিটি তৈরি হয়। এই ক্যাভিটির কারণেই দাঁতে ব্যথা এবং অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়।

কীভাবে দাঁতের ক্ষয় ঘটে?

দাঁতের ক্ষয় একটি ধীর প্রক্রিয়া এবং এটি কয়েকটি ধাপে ঘটে:

দাঁতের প্লাক তৈরি: মুখে খাবারের অবশিষ্টাংশ, বিশেষত শর্করা জাতীয় খাবার, দাঁতে আটকে যায় এবং ব্যাকটেরিয়া এটি ভেঙে প্লাক তৈরি করে।

অ্যাসিড উৎপন্ন: ব্যাকটেরিয়া এই শর্করাকে অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে।

এনামেল ক্ষয়: অ্যাসিড দাঁতের এনামেলকে দুর্বল করে দেয় এবং ক্ষয় শুরু হয়।

ক্যাভিটি তৈরি: এনামেলের ক্ষতির ফলে দাঁতে ছোট ছিদ্র বা গর্ত তৈরি হয়, যা ক্যাভিটি নামে পরিচিত।

দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধের উপায়

দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধের জন্য কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি:

নিয়মিত ব্রাশ করা: প্রতিদিন দু’বার দাঁত ব্রাশ করা ক্যাভিটি প্রতিরোধের অন্যতম কার্যকর উপায়।

ফ্লস করা: দাঁতের ফাঁকগুলোতে আটকে থাকা খাবার বের করতে নিয়মিত ফ্লস করা উচিত।

চিনি নিয়ন্ত্রণ করা: অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার ক্যাভিটি বাড়িয়ে তোলে, তাই এসব খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।

মুখ পরিষ্কার রাখা: খাবারের পর মুখ ধোয়া এবং মাউথওয়াশ ব্যবহার করা মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

ডেন্টিস্টের কাছে নিয়মিত যাওয়া: ছয় মাস পরপর ডেন্টিস্টের কাছে দাঁতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো ভালো।

‘দাঁতের পোকা’র ধারণাটি এক প্রাচীন মিথ যা আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তিতে সঠিক নয়। দাঁতের ক্ষয়ের আসল কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া এবং তাদের উৎপন্ন অ্যাসিড। সঠিক দাঁত-পরিচর্যা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুতরাং, দাঁতের যত্নে সচেতনতা এবং বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি গ্রহণ করা খুবই জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *