বিয়ে মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যেখানে বিশ্বাস, ভালোবাসা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপর ভিত্তি করে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিয়ের পর নারী বা পুরুষ উভয়ই পরকীয়ায় আকৃষ্ট হতে পারেন। এটি জটিল এবং স্পর্শকাতর একটি বিষয়, যা শুধুমাত্র সম্পর্কের দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে না, বরং ব্যক্তিগত মানসিক ও আবেগিক সমস্যার প্রতিফলন হতে পারে। এখানে আমরা আলোচনা করব বিয়ের পর নারীরা কখন এবং কেন পরকীয়ায় আকৃষ্ট হতে পারে।
পরকীয়ার সাধারণ কারণগুলো
মানসিক সংযোগের অভাব: বিয়ের পর অনেক সময় দম্পতির মধ্যে মানসিক সংযোগ নষ্ট হয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আবেগের অভাব বা কমিউনিকেশনের ঘাটতি একটি বড় কারণ হতে পারে। এমন অবস্থায় নারী যদি নিজেকে একাকী বা অবহেলিত বোধ করেন, তবে বাইরে থেকে আবেগিক সহানুভূতির খোঁজ করতে পারেন। কেউ তার অনুভূতিগুলো বুঝতে শুরু করলে বা মানসিক সমর্থন দিলে তিনি পরকীয়ার দিকে আকৃষ্ট হতে পারেন।
অপ্রাপ্ত ভালোবাসা ও যত্নের অভাব: যখন একজন নারী তার সঙ্গীর কাছ থেকে পর্যাপ্ত ভালোবাসা ও যত্ন পান না, তখন তিনি অন্য কোনো ব্যক্তির মধ্যে সেগুলো খুঁজে নিতে পারেন। বৈবাহিক সম্পর্কের রোমান্স এবং উত্তেজনা যদি ম্লান হয়ে যায়, তবে পরকীয়া সম্পর্ক সেই হারানো আবেগের উৎস হতে পারে।
সম্পর্কের একঘেয়েমি: দীর্ঘদিনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একঘেয়েমি একটি বড় সমস্যা। বিয়ের পর দাম্পত্য জীবন যখন একঘেয়ে এবং রুটিনমাফিক হয়ে যায়, তখন সেই জীবনে নতুনত্ব বা উত্তেজনা খুঁজতে নারী পরকীয়ায় আকৃষ্ট হতে পারেন। রোমান্টিকতা এবং উত্তেজনার অভাব নারীকে নতুন সম্পর্কের দিকে ধাবিত করতে পারে।
যৌন জীবন নিয়ে অসন্তোষ: যৌন জীবনের অসন্তোষ অনেক সময় পরকীয়ার পেছনের কারণ হতে পারে। অনেক নারীই যদি যৌন জীবনে পূর্ণতা বা তৃপ্তি না পান, তবে নতুন কারো সঙ্গে সেই তৃপ্তি খোঁজার চেষ্টা করতে পারেন। দাম্পত্য জীবনের যৌন সঙ্গতিহীনতা বা যৌন চাহিদার অমিল পরকীয়ার কারণ হতে পারে।
ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব বা অসম্মান: বিয়ের পর যদি দম্পতির মধ্যে বারবার ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব বা অসম্মানের ঘটনা ঘটে, তবে এটি মানসিক চাপ এবং দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সম্পর্কের মধ্যে যদি নারী নিজেকে অমর্যাদিত বা কম মূল্যায়িত বোধ করেন, তবে তিনি অন্য কারো কাছে মূল্যবোধ খুঁজে পেতে পারেন।
সামাজিক চাপ এবং প্রত্যাশা: অনেক সময় বিয়ের পর নারীদের ওপর সামাজিক এবং পারিবারিক চাপ বাড়তে থাকে। পরিবারের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে, নারীরা মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়েন এবং নিজেকে রক্ষা করার জন্য অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন, যেখানে তারা স্বস্তি খুঁজে পান।
আত্মসম্মানবোধের ঘাটতি: নারীরা যদি নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক বোধ করেন, তাদের আত্মসম্মানবোধ কমে যায়, তবে তারা অন্য কারো থেকে মূল্যায়ন এবং প্রশংসা পেতে চাইতে পারেন। অন্য কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে প্রশংসা বা ভালোবাসা পেলে তারা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়তে পারেন, কারণ এতে তারা নিজেদের আরও মূল্যবান মনে করেন।
পরকীয়া প্রতিরোধে করণীয়
পরকীয়া প্রতিরোধের জন্য সম্পর্কের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখা এবং একে অপরের অনুভূতি বুঝতে পারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে আবেগ এবং ভালোবাসার সুতো শক্তিশালী করতে পারলে, পরকীয়ার ঝুঁকি কমে যায়। এখানে কিছু করণীয় তুলে ধরা হলো:
কমিউনিকেশন: একে অপরের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা এবং মানসিক সংযোগ বজায় রাখা।
ভালোবাসা প্রকাশ: দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও যত্ন দেখানো।
পারস্পরিক সম্মান: সম্মান এবং মর্যাদা বজায় রেখে কথা বলা এবং সম্পর্কের মধ্যে যত্নবান হওয়া।
সম্পর্কের রোমান্স বজায় রাখা: বিয়ের পরও রোমান্টিকতা এবং আনন্দ ধরে রাখার চেষ্টা করা।
বিয়ের পর নারী বা পুরুষ উভয়েই বিভিন্ন কারণে পরকীয়ায় আকৃষ্ট হতে পারেন। তবে সম্পর্কের মধ্যে যদি পারস্পরিক বোঝাপড়া, কমিউনিকেশন এবং সম্মান বজায় থাকে, তবে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। নিজেদের মধ্যে সমস্যা থাকলে তা খোলামেলা আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত, যাতে সম্পর্কের ভিত আরও মজবুত হয়।