বর্তমান যুগে আমাদের অধিকাংশ কাজ অফিস বা বাসায় বসে করতে হয়। একটানা বসে কাজ করার এই অভ্যাসের কারণে শরীরের বিশেষ করে মেরুদণ্ডের সমস্যার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় একভাবে বসে থাকার ফলে পিঠ, কোমর ও ঘাড়ে ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে, যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, ফলে ব্যথা বাড়তে থাকে।
মেরুদণ্ডের ব্যথা বাড়ার কারণ
দীর্ঘ সময় একভাবে বসা: মেরুদণ্ডের জন্য সবচেয়ে বড় শত্রু একটানা বসে থাকা। সাধারণত দীর্ঘ সময় একই অবস্থানে বসে থাকলে মেরুদণ্ডের নিম্নাংশে (কোমরে) চাপ সৃষ্টি হয়, যা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অসঠিক বসার ভঙ্গি: অনেকেই সঠিকভাবে বসতে জানেন না। বাঁকা হয়ে বসা, চেয়ারে পর্যাপ্ত ব্যাক সাপোর্ট না পাওয়া, কিংবা মেরুদণ্ড সোজা না রেখে বসার ফলে মেরুদণ্ডের ক্ষতি হয় এবং ব্যথা বাড়ে।
চেয়ার ও টেবিলের উচ্চতা না মানা: অনেক ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ার বা টেবিলের উচ্চতা সঠিক না হওয়ার কারণে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসা সম্ভব হয় না। ফলে মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ব্যথা বাড়ায়।
একটানা বসে কাজের ক্ষতিকর প্রভাব
কোমর ব্যথা: দীর্ঘসময় বসে থাকার কারণে কোমরে ব্যথা হয় এবং তা ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথা: মেরুদণ্ডের ওপর চাপের ফলে পিঠ ও ঘাড়ে ব্যথা দেখা দেয়।
মাংসপেশির দুর্বলতা: একটানা বসে থাকার ফলে মাংসপেশির কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং মেরুদণ্ডের আশেপাশের পেশির দুর্বলতা বাড়ে।
রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা: দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, যা পিঠ ও কোমরে ব্যথা বাড়াতে সাহায্য করে।
মেরুদণ্ডের ব্যথা কমাতে করণীয়
সঠিক বসার ভঙ্গি: সবসময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসা উচিত। চেয়ারে বসলে পিঠে ব্যাক সাপোর্ট ব্যবহার করতে হবে।
নিয়মিত বিরতি নেওয়া: একটানা বসে কাজ না করে প্রতি ৩০-৪৫ মিনিট পর পর উঠে হাঁটা বা স্ট্রেচিং করা উচিত। এতে মেরুদণ্ডের উপর চাপ কমে।
ব্যায়াম করা: মেরুদণ্ডের ব্যথা প্রতিরোধে নিয়মিত ব্যায়াম করা অত্যন্ত কার্যকরী। পিঠ ও কোমরের জন্য বিশেষ স্ট্রেচিং ব্যায়াম করতে পারেন।
সঠিক চেয়ার ও টেবিল নির্বাচন: আপনার চেয়ারের উচ্চতা ও টেবিলের সাথে মিল রেখে সঠিক ভাবে বসতে হবে। মেরুদণ্ডের ব্যথা কমানোর জন্য আরামদায়ক চেয়ার ব্যবহার করা উচিত।
পান পান করা: মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য পানি পান করা জরুরি। শরীরের পানি শূন্যতা মেরুদণ্ডের সমস্যা বাড়াতে পারে।
দীর্ঘক্ষণ একটানা বসে কাজ করার ফলে মেরুদণ্ডের ব্যথা বাড়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। সঠিক ভঙ্গি, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিরতি নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব। কর্মস্থলে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুললে ব্যথামুক্ত জীবন যাপন সম্ভব।