চোখের অঞ্জনি কী? হলে কী করবেন?

অঞ্জনি হলো চোখের পাপড়ির গোড়ার গ্রন্থিতে ঘটে যাওয়া একটি সাধারণ প্রদাহজনিত সমস্যা। এটি দেখতে ছোট ফোঁড়ার মতো, লাল এবং ফুলে ওঠা হয়, যা চোখের পাঁপড়ির ভেতরে বা বাইরে হতে পারে। মূলত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে অঞ্জনি সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা সাধারণত স্বল্প সময়ে সেরে যায়, তবে তীব্র হলে অস্বস্তি ও ব্যথার কারণ হতে পারে।

অঞ্জনির লক্ষণগুলো কী কী?

অঞ্জনির প্রাথমিক লক্ষণগুলো বেশ স্পষ্ট এবং তা সহজেই চেনা যায়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ নিচে দেওয়া হলো:

চোখের পাঁপড়ির গোড়ায় লালচে ফোঁড়া: পাঁপড়ির কাছে ছোট একটি গুটি দেখা যায় যা ফুলে উঠতে থাকে।

পাল্পেশিয়া বা চুলকানি: অঞ্জনি হলে চোখের আশপাশে চুলকানি বা জ্বালা অনুভব হয়।

ব্যথা: ফোঁড়ার স্থানে হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে যখন চোখের পাঁপড়ি বন্ধ করা হয় বা ছোঁয়া হয়।

চোখে পানি পড়া: চোখে অঞ্জনি হলে অতিরিক্ত পানি পড়া বা চোখের চারপাশে অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে।

ফোঁড়ার বড় হওয়া: কিছু ক্ষেত্রে ফোঁড়া বড় হতে থাকে, যা চোখের পাঁপড়ি ভারি মনে হয় এবং দৃষ্টিশক্তিতে সাময়িকভাবে ঝাপসা আসতে পারে।

অঞ্জনি হওয়ার কারণ

অঞ্জনি সাধারণত স্ট্যাফাইলোকক্কাস নামক ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের কারণে হয়। চোখের পাঁপড়ির গোড়ার তৈল গ্রন্থি সংক্রমিত হয়ে ফোঁড়া তৈরি করে। নীচে অঞ্জনি হওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো তুলে ধরা হলো:

অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ স্পর্শ করা: চোখে ময়লা বা ব্যাকটেরিয়া ঢুকে গেলে অঞ্জনি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির অভাব: চোখের পাঁপড়ি নিয়মিত পরিষ্কার না করলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার: কন্টাক্ট লেন্স পরার আগে সঠিকভাবে হাত না ধোয়া বা অপরিষ্কার লেন্স ব্যবহারের কারণে অঞ্জনি হতে পারে।

মেকআপের কারণে: পুরোনো বা মেয়াদোত্তীর্ণ মেকআপ ব্যবহার করলে এবং তা ঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে অঞ্জনি হতে পারে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতা: দেহের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে চোখের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

অঞ্জনি হলে কী করবেন?

অঞ্জনি হওয়ার পর কিছু সাধারণ পদ্ধতিতে ঘরে বসেই এ সমস্যার সমাধান করা যায়। তবে যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। অঞ্জনি হলে কী করবেন তা নিচে আলোচনা করা হলো:

গরম পানির সেঁক দেওয়া: গরম পানির সেঁক অঞ্জনির সবচেয়ে কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকারগুলোর একটি। এটি ফোঁড়ার সংক্রমণ দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। একটি পরিষ্কার কাপড় বা তুলো গরম পানিতে ভিজিয়ে ১০-১৫ মিনিট ধরে চোখে রেখে সেঁক দিন। প্রতিদিন ৩-৪ বার এটি করলে ফোঁড়াটি দ্রুত সেরে যাবে।

চোখের পাঁপড়ি পরিষ্কার রাখা: চোখের পাঁপড়ি এবং চোখের চারপাশ সবসময় পরিষ্কার রাখুন। হাত ধুয়ে তবে চোখ স্পর্শ করুন এবং মুখ ও চোখ ধোয়ার পর পরিষ্কার তোয়ালে ব্যবহার করুন।

অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ: যদি অঞ্জনির ব্যথা তীব্র হয় বা ফোঁড়াটি বড় হয়ে যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ বা মলম ব্যবহার করতে পারেন। এ ধরনের ওষুধ সংক্রমণ কমাতে এবং দ্রুত সারাতে সহায়তা করে।

মেকআপ ও কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার এড়িয়ে চলুন: অঞ্জনি হলে মেকআপ ও কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা উচিত নয়। এটি সংক্রমণকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। চোখ ভালো না হওয়া পর্যন্ত মেকআপ ও লেন্স পরিহার করা উচিত।

সংক্রমণ প্রতিরোধ করা: অঞ্জনি হওয়ার পর চোখ ঘষা বা চাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এটি সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে দিতে পারে এবং সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। প্রয়োজনে নখ ছোট রাখুন এবং হাত সবসময় পরিষ্কার রাখুন।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

অঞ্জনি সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। নিচের পরিস্থিতিগুলোতে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

অঞ্জনির ফোঁড়া খুব বড় হয়ে গেলে।
ফোঁড়া ৫-৭ দিনের মধ্যে সেরে না উঠলে।
চোখের দৃষ্টিতে ঝাপসা আসলে বা দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন দেখা দিলে।
চোখে তীব্র ব্যথা, লালচে ভাব বা ফুলে ওঠা দেখা দিলে।
ফোঁড়াটি থেকে পুঁজ বা রক্তপাত হলে।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

অঞ্জনি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:

নিয়মিত হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখা।
মেকআপের সরঞ্জাম ও কন্টাক্ট লেন্স পরিষ্কার রাখা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ মেকআপ ব্যবহার না করা।
চোখের পাঁপড়ি ও আশপাশের অঞ্চল পরিষ্কার রাখা।
অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা।

চোখের অঞ্জনি সাধারণত মারাত্মক কিছু নয় এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে সেরে যায়। তবে এটি যদি তীব্র আকার ধারণ করে বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এবং সতর্কতা অবলম্বন করলে অঞ্জনির ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *