চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত অনেকের জন্যই সহজ নয়। এটি আপনার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই হুট করে আবেগের বশে বা কোনো চাপের মধ্যে পড়ে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভালো। নিচে কিছু বিষয় দেওয়া হলো যা চাকরি ছাড়ার আগে অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত, যাতে ভবিষ্যতের জন্য আপনি আরও প্রস্তুত থাকতে পারেন।
১. অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করুন
চাকরি ছাড়ার আগে আপনার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাকরি ছাড়া মানেই সঠিক সময়ে বেতন না পাওয়া এবং আপনার মাসিক খরচগুলো ঠিকমতো মেটানোর চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। আপনার পর্যাপ্ত সঞ্চয় আছে কি না, তা যাচাই করুন। অন্তত ৬ মাসের খরচ মেটানোর মতো অর্থ সংরক্ষণে রাখলে কিছুটা নিরাপত্তা পাবেন। সঞ্চয় না থাকলে নতুন চাকরি খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত চাকরি না ছাড়াই ভালো।
২. নতুন চাকরি বা আয়ের উৎস নিশ্চিত করুন
চাকরি ছাড়ার আগে নিজের জন্য নতুন চাকরি বা আয়ের উৎস নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান চাকরি ছাড়ার পর যদি নতুন কোনো চাকরি না থাকে, তবে কিছুদিন বেকার থাকতে হতে পারে। তাই আগে থেকেই নতুন চাকরির সন্ধান শুরু করে দিন। এছাড়া ফ্রিল্যান্সিং বা নিজের কোনো ব্যবসার পরিকল্পনা থাকলে সেটির স্থিতিশীলতা এবং সাফল্য সম্পর্কে আশ্বস্ত হওয়া উচিত।
৩. চাকরি ছাড়ার আইনি প্রক্রিয়া বুঝে নিন
চাকরি ছাড়ার আগে প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছাড়ার নীতিমালা ভালোভাবে পড়ে নিন। চাকরির চুক্তিপত্রে চাকরি ছাড়ার সময়সীমা ও অন্যান্য আইনি বিষয় উল্লেখ থাকে। তাই এই নিয়মগুলো মেনে চলা জরুরি। চাকরি ছাড়ার আগে প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক কিনা, তা জানতে হবে। আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করলে চাকরি ছাড়ার পরে ঝামেলা হতে পারে।
৪. বর্তমান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখুন
চাকরি ছাড়ার পরও পুরোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। ভবিষ্যতে আপনার ক্যারিয়ার বা নতুন কোনো প্রজেক্টে তাদের সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে। তাই চাকরি ছাড়ার সময় নম্র ও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানিয়ে এবং সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চাকরি ছাড়ুন।
৫. পেশাগত পরামর্শ বা রেফারেন্স পেতে পারেন কি না দেখুন
পুরোনো সহকর্মী বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে রেফারেন্স পেতে পারেন কিনা তা আগেই আলোচনা করে নিন। নতুন চাকরিতে আপনার পেশাগত দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য এই রেফারেন্স কাজে আসতে পারে। চাকরি ছাড়ার পরও পুরোনো কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার মাধ্যমে ভবিষ্যতে পেশাগত পরামর্শ পেতে সুবিধা হতে পারে।
৬. চাকরি ছাড়ার সুনির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করুন
কেন আপনি চাকরি ছাড়ছেন, সেই কারণটি পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত করুন। এটি হতে পারে পেশাগত অগ্রগতি, বর্তমান কাজের পরিবেশ, অথবা ব্যক্তিগত কারণ। চাকরি ছাড়ার সঠিক কারণ জানা থাকলে সিদ্ধান্ত নেওয়া আরও সহজ হবে এবং ভবিষ্যতে এমন ভুল চাকরি বা পরিস্থিতিতে পড়ার সম্ভাবনা কমবে।
৭. কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে রাখুন
চাকরি ছাড়ার আগে ব্যক্তিগত বা পেশাগত কোনো গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট যদি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে বা অন্য কোনো জায়গায় থেকে যায়, তবে সেগুলো সংগ্রহ করে রাখুন। পুরোনো ইমেইল, ডকুমেন্ট বা অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক তথ্য যাতে আপনি ভবিষ্যতে ব্যবহার করতে পারেন, তা নিশ্চিত করুন।
৮. আপনার স্বাস্থ্যবিমা বা অন্যান্য সুবিধা যাচাই করুন
আপনার বর্তমান প্রতিষ্ঠানে যদি স্বাস্থ্যবিমা বা অন্য কোনো সুবিধা থাকে, তবে চাকরি ছাড়ার পর সেই সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে কিনা, তা যাচাই করুন। নতুন চাকরিতে এই সুবিধাগুলো পাবেন কিনা তা জেনে নিন। যদি কিছু সময়ের জন্য বেকার থাকতে হয়, তবে এই সুযোগগুলো না থাকলে জরুরি অবস্থায় সমস্যায় পড়তে পারেন।
৯. পেশাগত উন্নতির পরিকল্পনা করুন
চাকরি ছাড়ার পরে আপনার পেশাগত উন্নতির জন্য কী করবেন, তা নিয়ে পরিকল্পনা করা উচিত। নতুন স্কিল শেখা, কোনো কোর্স সম্পন্ন করা, অথবা নতুন কোনো ব্যবসায়িক উদ্যোগে যুক্ত হওয়ার চিন্তা থাকতে পারে। ক্যারিয়ারের এই পরিবর্তন সময়টিকে ভালোভাবে কাজে লাগানো উচিত।
১০. মানসিক প্রস্তুতি নিন
চাকরি ছাড়ার পর নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা জরুরি। চাকরি পরিবর্তন বা নতুন কোনো উদ্যোগে যাওয়া মানেই নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া। তাই মন থেকে ইতিবাচক থাকা এবং ধৈর্য ধরে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা তৈরি করুন।
চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে উপরোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে একটি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। চাকরি ছাড়ার পর নতুন জীবন শুরুর পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মানসিক, আর্থিক, এবং পেশাগতভাবে প্রস্তুত থাকলে ভবিষ্যৎ আরও মসৃণ হতে পারে।