শিশুদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাদের আচরণে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে। একসময় খুবই নম্র এবং শান্ত শিশু হঠাৎ বড় হতে শুরু করার পর অভদ্র আচরণ করতে শুরু করতে পারে। এমন আচরণ পরিবারের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটি একটি সাধারণ সমস্যা, তবে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কার্যকরী পদ্ধতি গ্রহণ করলে এই ধরনের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আসুন, আমরা জানি কীভাবে তর্ক না করে এই সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।
একে অপরকে শ্রদ্ধা জানানো শেখান
শিশুদের শিখানো উচিত কীভাবে নিজেদের মধ্যে, বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হয়।
শুরুতেই শিষ্টাচার শেখান: শিষ্টাচার শিশুদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। “ধন্যবাদ”, “মাফ করবেন”, “দয়া করে” ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করতে শিশুকে উৎসাহিত করুন। যখন শিশুকে শিখানো হয় অন্যদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে, তখন তারা নিজে থেকেই তাদের আচরণে পরিবর্তন আনে।
শ্রদ্ধার পরিবেশ তৈরি করুন: আপনার বাড়িতে একটি শ্রদ্ধাশীল পরিবেশ সৃষ্টি করুন। পরিবারের সদস্যরা একে অপরকে শ্রদ্ধা জানালে শিশুও এটি শিখবে। তাদের শিখান, অন্যদের মতামত শোনা এবং সম্মান করা গুরুত্বপূর্ণ।
ইতিবাচক শাস্তি ব্যবহার করুন
অভদ্র আচরণ যদি বেড়ে যায় তবে অভিভাবকদের উচিত সঠিকভাবে শাস্তি দেওয়া, কিন্তু সেক্ষেত্রে শাস্তির পদ্ধতি ইতিবাচক এবং সহানুভূতিশীল হতে হবে।
নেতিবাচক আচরণ থেকে বিরত রাখুন: যদি শিশু কিছু ভুল আচরণ করে, তা হলে তাকে ধীরে ধীরে বুঝিয়ে বলুন কেন তার এই আচরণ খারাপ। শাস্তি দেওয়ার আগে বুঝিয়ে বলুন কেন এটি সঠিক নয় এবং তার আচরণে কী পরিবর্তন আনা উচিত।
প্রশংসার মাধ্যমে ভাল আচরণ উৎসাহিত করুন: সন্তানকে ভাল কাজের জন্য প্রশংসা দিন এবং তার প্রচেষ্টাকে মূল্যায়ন করুন। এতে সে আরও ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহিত হবে এবং অভদ্র আচরণ কমাবে।
শিশুদের শোনার অভ্যাস গড়ে তুলুন
শিশুরা যখন বড় হয়, তখন তারা তাদের অনুভূতি এবং মতামত প্রকাশ করতে শুরু করে। অনেক সময় শিশুরা অভদ্রভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশ করে, কিন্তু তা নাও বুঝতে পারে।
শিশুকে শোনার গুরুত্ব: যখনই শিশুটি কিছু বলে, তাকে ধৈর্য সহকারে শুনুন। তার কথা শোনার মাধ্যমে তাকে মূল্যবান অনুভব করান। এটি তাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে, তার ভাবনাগুলোর গুরুত্ব রয়েছে এবং এটি তার ভালো আচরণে সহায়ক হবে।
পরিবারের সঙ্গে খোলামেলা যোগাযোগ: শিশুকে পরিবারে সকলের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলতে শেখান। এটি তার মধ্যে আবেগীয় সমর্থন তৈরি করে এবং সে তার অনুভূতি ভালোভাবে প্রকাশ করতে শিখবে।
সামাজিকতা এবং আচরণ সম্পর্কিত শিক্ষাদান
শিশুর জন্য সামাজিক শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে সামাজিক আচরণ শিখে তারা বড় হয়ে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।
বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক গড়ে তোলা: শিশুকে শেখান কিভাবে ভালো বন্ধু হতে হয় এবং সবার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়। এর মাধ্যমে শিশুর মধ্যে সহানুভূতি, সহমর্মিতা এবং সহযোগিতা গড়ে ওঠে।
সীমাবদ্ধতা ও নিয়ম: শিশুকে প্রতিদিনের কার্যক্রমের মধ্যে নিয়ম এবং সীমাবদ্ধতা শিখান। কখনো কখনো শিশুর অভদ্র আচরণ তার জন্য কোনো বাধা বা সীমাবদ্ধতার অভাবের কারণে হতে পারে। এই সীমাবদ্ধতা তাদের সঠিক পথে চলতে সহায়ক হয়।
শিশুর মানসিকতা বুঝে শিখানো
বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর মানসিকতার পরিবর্তন হয়। তাই তাদের শিক্ষা বা শাস্তি দেওয়ার আগে তাদের মানসিক অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করা উচিত।
অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন এবং বৃদ্ধি বোঝানো: শিশুর মধ্যে যদি কোনো মানসিক চাপ, দুঃখ, বা হতাশা থাকে, তা সোজা তার আচরণে প্রভাব ফেলতে পারে। তার অনুভূতি বুঝে তাকে শিখান কিভাবে নিজেকে অভিব্যক্তি করতে হয়।
বিশ্রাম ও উপযুক্ত সময় দেওয়া: শিশুকে সঠিকভাবে বিশ্রাম এবং সময় দিন। এটি তাকে মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে এবং আচরণে শৃঙ্খলা আনবে।
পেশাগত সাহায্য গ্রহণ করুন
যদি অভদ্র আচরণ বেড়ে যায় এবং আপনি নিজের চেষ্টায় এটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তবে পেশাদার মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া উচিত। পেশাদার সাহায্য শিশুদের মানসিক সমস্যা বা আচরণগত পরিবর্তন সমাধান করতে সহায়ক হতে পারে।
শিশুদের অভদ্র আচরণ মোটেও তাদের অস্বাভাবিকতা নয়, বরং একটি সাধারণ মানসিক বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে। তবে, অভিভাবকদের সঠিক পদ্ধতিতে শিশুদের শৃঙ্খলা এবং সামাজিকতা শেখানোর মাধ্যমে তাদের আচরণ সঠিক পথে আনা সম্ভব। ধৈর্য, সহানুভূতি, এবং সঠিক গাইডলাইন দিয়ে আপনি আপনার শিশুকে সুস্থ, সামাজিক এবং সহানুভূতিশীল একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।