শীতকালে শরীরের বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করতে সঠিক পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা অনেক বাড়িয়ে দেয়। শীতের সময় আমাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে, এবং শরীরে ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ বৃদ্ধি পেতে পারে। এই সময়ে চিয়াসিড এবং ফ্ল্যাক্সসিড খুবই কার্যকর দুটি খাবার হতে পারে যা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখে। চলুন, জানি কেন শীতে চিয়াসিড এবং ফ্ল্যাক্সসিড খাওয়া উচিত।
চিয়াসিডের উপকারিতা
চিয়াসিড (Chia Seeds) হল ছোট্ট কিন্তু পুষ্টিতে ভরপুর এক ধরনের বীজ যা নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারে কাজে আসে। এই বীজগুলি শরীরে শক্তি যোগাতে, ত্বককে উজ্জ্বল করতে, এবং মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
কী কী উপকারিতা রয়েছে?
ওজন নিয়ন্ত্রণ: চিয়াসিডে থাকা ফাইবার শরীরের হজম ক্ষমতাকে ভালো রাখে এবং ক্ষুধার অনুভূতি কমায়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: এই বীজগুলিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: চিয়াসিডে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি: চিয়াসিডের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা ত্বককে শুষ্ক হতে দেয় না এবং ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে।
কীভাবে খেতে হবে?
চিয়াসিড সহজেই পানীয়, দই, স্যালাড অথবা স্মুদি তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফ্ল্যাক্সসিডের উপকারিতা
ফ্ল্যাক্সসিড (Flax Seeds) একটি অতি পুষ্টিকর বীজ যা সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি শরীরের নানা সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখে এবং শীতকালে বিশেষ উপকারে আসে।
কী কী উপকারিতা রয়েছে?
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ফ্ল্যাক্সসিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যালফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড (ALA), যা একটি ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং কোষের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।
হজমশক্তি বৃদ্ধি: ফ্ল্যাক্সসিডে থাকা ফাইবার পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী: ফ্ল্যাক্সসিডে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে। শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, কিন্তু ফ্ল্যাক্সসিডের মাধ্যমে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা সম্ভব।
প্রদাহ কমানো: ফ্ল্যাক্সসিডের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ প্রদাহ কমাতে এবং শরীরের বেদনাকে উপশম করতে সাহায্য করে।
কীভাবে খেতে হবে?
ফ্ল্যাক্সসিড খাওয়ার জন্য এটি গুঁড়ো করে নিলেও সুবিধা হবে, কারণ তাতে শরীর তা ভালোভাবে শোষণ করতে পারে। আপনি এটি দই, স্যুপ, স্যালাড, কিংবা স্মুদিতেও ব্যবহার করতে পারেন।
শীতকালে কেন চিয়াসিড এবং ফ্ল্যাক্সসিড গুরুত্বপূর্ণ?
ত্বকের যত্নে: শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে, কিন্তু চিয়াসিড এবং ফ্ল্যাক্সসিডে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে আর্দ্র এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকে বলিরেখা পড়া, শুষ্কতা এবং ফুসকুড়ি হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো: শীতকালে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়, কিন্তু চিয়াসিড এবং ফ্ল্যাক্সসিডে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলি তা বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ঠান্ডা, সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে সুরক্ষিত রাখে।
হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য: শীতকালে অনেকের হৃদযন্ত্রের সমস্যা বেড়ে যায়। এই সময়ে চিয়াসিড এবং ফ্ল্যাক্সসিডের মধ্যে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
হজমশক্তির উন্নতি: শীতে খাবারের পরিবর্তন, হজমে সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। চিয়াসিড এবং ফ্ল্যাক্সসিডে থাকা ফাইবার হজমশক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়।
চিয়াসিড এবং ফ্ল্যাক্সসিডের উপকারিতা শীতকালে বিশেষভাবে অনুভূত হয়। ত্বক, হজম, রোগ প্রতিরোধ, এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় এগুলো অত্যন্ত কার্যকর। এ সময় এগুলো আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করলে শীতের নানা সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং শরীর থাকবে সুস্থ ও সবল। তাই আজ থেকেই চিয়াসিড এবং ফ্ল্যাক্সসিড আপনার খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন এবং শীতকালে সুস্থ জীবন উপভোগ করুন।