বেশিক্ষণ টয়লেটে থাকলে কী হয়?

অনেকেই টয়লেটে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন—বই পড়া, মোবাইল ফোন ব্যবহার বা একান্তে কিছু সময় কাটানোর অভ্যাস হয়ে উঠেছে অনেকের। কিন্তু বেশিক্ষণ টয়লেটে বসে থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি শরীরের নানা সমস্যার কারণ হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন জটিলতায় ভুগতে হতে পারে। চলুন জেনে নিই, কেন টয়লেটে বেশিক্ষণ থাকা ক্ষতিকর এবং এর থেকে রক্ষা পেতে কী করা উচিত।

বেশিক্ষণ টয়লেটে বসে থাকার ক্ষতিকর প্রভাব

হেমোরয়েড বা পাইলসের ঝুঁকি বৃদ্ধি: দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকার ফলে মলদ্বারের শিরাগুলোতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা হেমোরয়েড বা পাইলসের কারণ হতে পারে। এতে মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলে যায় এবং ব্যথা, রক্তপাত বা অস্বস্তি দেখা দেয়।

শিরার রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি: দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে শরীরের নীচের অংশে রক্ত চলাচল ধীর হয়ে যায়। বিশেষত মলদ্বারের চারপাশের শিরাগুলোতে চাপ সৃষ্টি হয়, যা রক্তপ্রবাহে বাধা দেয় এবং বিভিন্ন শিরাজনিত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।

কোমর ও পিঠে ব্যথা: একটানা একই অবস্থানে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে কোমর ও পিঠের পেশিগুলোতে চাপ পড়ে। নিয়মিত এমন অভ্যাসে পিঠের ব্যথা বা মেরুদণ্ডের অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মলত্যাগের সমস্যা: অনেকে মনে করেন যে বেশি সময় টয়লেটে থাকলে মলত্যাগ সহজ হবে। কিন্তু এটি বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের কারণে মলদ্বারের পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়িয়ে দেয়।

মোবাইল বা বই ব্যবহারে মনোযোগ হারানো: টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ মোবাইল বা বই নিয়ে বসে থাকলে মস্তিষ্কে অস্থিরতা দেখা দেয়। এর ফলে মনোযোগ নষ্ট হয় এবং মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়।

কেন দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকেন?

মোবাইল ফোন বা গ্যাজেট ব্যবহার: আধুনিক যুগে অনেকেই টয়লেটে বসে মোবাইল ব্যবহার করেন। এটি এক ধরনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

মানসিক স্বস্তির খোঁজ: অনেকে একান্ত সময় কাটানোর জন্য টয়লেটকে নিরাপদ স্থান মনে করেন এবং সেখানে আরাম বোধ করেন।

মলত্যাগে সমস্যা: কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে দীর্ঘ সময় টয়লেটে বসে থাকা বাধ্যতামূলক হয়ে যেতে পারে।

বেশিক্ষণ টয়লেটে বসার ঝুঁকি এড়ানোর উপায়

মোবাইল বা বই এড়িয়ে চলুন: টয়লেটে মোবাইল ফোন, বই বা অন্য কোনো গ্যাজেট নিয়ে না যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি সময় ক্ষেপণের অন্যতম প্রধান কারণ।

স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করুন: মলত্যাগের জন্য ৫-১০ মিনিটের বেশি সময় ব্যয় না করাই স্বাস্থ্যসম্মত। এর বেশি সময় বসে থাকা প্রয়োজন নেই।

সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন: কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর পানি পান করুন এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ফল, শাকসবজি এবং পূর্ণ শস্য বেশি পরিমাণে খান।

ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করুন: নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করলে হজম প্রক্রিয়া ভালো হয় এবং মলত্যাগের সময় সহজ হয়।

টয়লেটে যাওয়ার নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে টয়লেটে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি মলত্যাগের প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক ও সহজ করে তুলবে।

বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা

যদি নিয়মিতভাবে টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয় এবং বারবার কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাইলসের সমস্যা দেখা দেয়, তবে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দীর্ঘস্থায়ী এসব সমস্যা হজমপ্রক্রিয়ার গুরুতর জটিলতায় রূপ নিতে পারে।

টয়লেটে দীর্ঘ সময় কাটানোর অভ্যাস স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই এই অভ্যাস পরিহার করে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করতে হবে। সঠিক সময়ে মলত্যাগের জন্য নিয়মিত রুটিন মেনে চলা, সুষম খাদ্যগ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখবেন, সুস্থ শরীরই সুস্থ জীবনের মূল ভিত্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *