হাড়ের যত্ন-আত্তি ও বয়স্ক মানুষের করণীয়

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ৫০ বছরের পর থেকে হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে। তাই বয়স্ক মানুষের জন্য হাড়ের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন হাড়কে সুস্থ ও শক্তিশালী রাখতে পারে।

বয়সের সঙ্গে হাড়ের সমস্যা কেন হয়?

হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি শোষণের ক্ষমতা কমে যায়, ফলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়।

হরমোনের পরিবর্তন: মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়, যা হাড়ের ক্ষয় বাড়ায়। পুরুষদেরও বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে হাড় দুর্বল হয়।

জীবনযাত্রা ও অভ্যাস: অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ব্যায়ামের অভাব এবং ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণ হাড়ের ক্ষতি করে।

জন্মগত বা অন্যান্য রোগ: ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, আর্থ্রাইটিস বা কিডনি রোগ হাড় দুর্বল হওয়ার অন্যতম কারণ।

হাড়ের যত্নে বয়স্কদের করণীয়

সুষম খাদ্যগ্রহণ: হাড় শক্ত রাখতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার- দুধ, দই, চিজ, পালং শাক, বাঁধাকপি। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার- ডিম, সামুদ্রিক মাছ, সূর্যালোক।

নিয়মিত ব্যায়াম: বয়স অনুযায়ী হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, ইয়োগা বা হালকা ওজন তোলা হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। ফিজিওথেরাপির পরামর্শ নিতে পারেন।

সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।

ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা: ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। এগুলো পরিহার করলে হাড়ের ক্ষয় রোধ হয়।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হাড়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। সঠিক ওজন বজায় রাখা হাড়ের জন্য উপকারী।

হাড় ক্ষয় প্রতিরোধে বাড়তি যত্ন

উপযুক্ত আসবাব ব্যবহার: বয়স্কদের বসা ও চলাফেরার জন্য আরামদায়ক চেয়ার ও বেড ব্যবহার করা উচিত। অতিরিক্ত নিচু বা শক্ত আসবাব এড়িয়ে চলুন।

পতন প্রতিরোধে সতর্কতা: বাড়িতে চলাফেরার সময় পিছলে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতে মসৃণ ফ্লোরে কার্পেট বা রাবার ম্যাট ব্যবহার করুন।

পুষ্টি পরীক্ষার অভ্যাস: বয়স অনুযায়ী হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা করানো উচিত। বিশেষ করে যারা হাড়ের রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি।

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

যদি হাড়ের ব্যথা, জয়েন্টে অস্বস্তি বা চলাফেরায় অসুবিধা হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। ডাক্তার প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন।

হাড় আমাদের শরীরের মূল ভিত্তি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে হাড়ের ক্ষয় রোধ করা সম্ভব। হাড় মজবুত রাখার জন্য সচেতন থাকুন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় গুরুত্ব দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *