শিশুদের বেড়ে ওঠার স্বাভাবিক অংশ হলো চারপাশের সবকিছু মুখে দেওয়া। তারা নিজেদের জগৎকে চিনতে ও বুঝতে মুখ দিয়েই শুরু করে। খেলনা, বই, চামচ কিংবা মায়ের হাত—যাই সামনে পায়, মুখে নিয়ে দেখতে চায়। এটি সাধারণ আচরণ হলেও এতে লুকিয়ে থাকতে পারে বিপদ। খেলনার উপাদান, আকার বা পরিচ্ছন্নতা যদি ঠিক না হয়, তবে তা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
কেন শিশু খেলনা মুখে দেয়?
জ্ঞান আহরণের মাধ্যম: শিশুদের ইন্দ্রিয়গুলোর মধ্যে মুখ সবচেয়ে সংবেদনশীল। তারা খেলনা মুখে দিয়ে তার আকৃতি, গঠন ও স্বাদ বুঝতে চায়।
দাঁত ওঠার সময়: দাঁত উঠতে শুরু করলে মাড়িতে চুলকানি হয়। তাই তারা মুখে খেলনা দিয়ে স্বস্তি পেতে চায়।
কৌতূহল: চারপাশের জগৎ নিয়ে শিশুদের কৌতূহল থাকে প্রবল। মুখে দিয়ে তারা খেলনার প্রকৃতি বুঝতে চায়।
সম্ভাব্য ঝুঁকি
বিষাক্ত উপাদান: অনেক খেলনা নিম্নমানের প্লাস্টিক বা রং দিয়ে তৈরি, যা শিশুর শরীরের জন্য বিষাক্ত হতে পারে।
অ্যাসফিক্সিয়া (শ্বাসরোধ): ছোট আকারের খেলনা বা অংশ মুখে গেলে শ্বাসনালী আটকে দম বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
জীবাণু সংক্রমণ: খেলনা পরিষ্কার না থাকলে তা মুখে দিয়ে শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
দাঁতের ক্ষতি: খুব শক্ত খেলনা মুখে দিলে দাঁতে ক্ষতি হতে পারে।
কী করবেন?
নিরাপদ খেলনা নির্বাচন করুন: খেলনা কেনার সময় বিপিএ মুক্ত, নরম প্রান্ত ও বড় আকারের খেলনা কিনুন।
পরিষ্কার রাখুন: নিয়মিত খেলনা সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার রাখুন।
তীক্ষ্ণ বা ছোট অংশের খেলনা এড়িয়ে চলুন: এমন খেলনা কিনুন যা ছোট অংশে বিভক্ত হয় না।
নিরীক্ষণ করুন: শিশু যখন খেলছে তখন তার পাশে থাকুন এবং নজর রাখুন।
দাঁত ওঠার জন্য বিশেষ চুইং খেলনা দিন: দাঁত ওঠার সময়ে চুইং রিং বা নিরাপদ টিথার ব্যবহার করতে দিন।
কবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
যদি আপনার শিশু খেলনা মুখে দেওয়ার পর নিচের যেকোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন:
বমি বা পেটে ব্যথা
অস্বাভাবিক নিঃশ্বাসের কষ্ট
ঠোঁট নীল হয়ে যাওয়া
বারবার কাশির মতো সমস্যা
শিশুরা খেলনার মাধ্যমে জগতকে চিনতে শিখলেও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। সঠিক খেলনা নির্বাচন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে শিশুর এই স্বাভাবিক আচরণকে নিরাপদ রাখা সম্ভব। মনে রাখবেন, খেলনা শুধু আনন্দের জন্য নয়, এটি শেখারও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।