সিনেমা, টেলিভিশন অনুষ্ঠান বা অন্য ধরনের অডিওভিজুয়াল কনটেন্ট তৈরি করার পর তা জনসাধারণের সামনে প্রদর্শনের আগে সরকার বা কোনো নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যাচাই ও অনুমোদন পেতে হয়। এই যাচাই প্রক্রিয়া দুটি প্রধান বোর্ড দ্বারা সম্পন্ন হয়—সেন্সর বোর্ড ও সার্টিফিকেশন বোর্ড। তবে, এই দুটি বোর্ডের কাজ ও কার্যক্রমে কিছু মূল পার্থক্য রয়েছে। সেন্সর বোর্ডের প্রধান কাজ কনটেন্টের সামগ্রীকে নির্দিষ্ট নৈতিক মানদণ্ড অনুসারে যাচাই করা এবং প্রয়োজনে সংশোধন বা নিষিদ্ধকরণ, অন্যদিকে সার্টিফিকেশন বোর্ড কনটেন্টের শ্রেণিবিন্যাস ও প্রদর্শনের অনুমতি প্রদান করে। এই প্রতিবেদনে সেন্সর বোর্ড ও সার্টিফিকেশন বোর্ডের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো।
১. কার্যক্রমের ধরন
সেন্সর বোর্ড: সেন্সর বোর্ডের প্রধান কাজ হলো সিনেমা বা অন্য ধরনের কনটেন্টের মধ্যে আপত্তিকর, অবমাননাকর বা অনৈতিক অংশগুলি চিহ্নিত করা এবং প্রয়োজনে তা কাটছাঁট করা। সেন্সর বোর্ড সাধারণত কনটেন্টের নৈতিক মানদণ্ডের ওপর নজর রাখে, যাতে কনটেন্টে কোনো ধরনের সহিংসতা, যৌনতা, ধর্মীয় সংবেদনশীলতা বা সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী কিছু না থাকে।
সার্টিফিকেশন বোর্ড: সার্টিফিকেশন বোর্ডের কাজ হলো কনটেন্টের জন্য নির্দিষ্ট শ্রেণিবিন্যাস করা এবং কনটেন্টটি কোন দর্শকের জন্য উপযুক্ত তা নির্ধারণ করা। উদাহরণস্বরূপ, এটি নির্ধারণ করে যে কনটেন্টটি শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, নাকি শিশু এবং সাধারণ দর্শকের জন্যও উপযুক্ত। সার্টিফিকেশন বোর্ড কোনো কনটেন্ট নিষিদ্ধ বা কাটছাঁট করার কাজ করে না।
২. প্রকৃত উদ্দেশ্য
সেন্সর বোর্ড: সেন্সর বোর্ডের উদ্দেশ্য হলো কনটেন্টে এমন কোনো অংশ থাকলে তা জনসাধারণের জন্য অনুপযুক্ত ঘোষণা করা এবং তা সংশোধনের নির্দেশ দেয়া। এটি মূলত সামাজিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কনটেন্ট যাচাই করে এবং দেশের আইন ও সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে তা সংশোধন বা নিষিদ্ধ করতে পারে।
সার্টিফিকেশন বোর্ড: সার্টিফিকেশন বোর্ডের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কনটেন্টের শ্রেণিবিন্যাস করা এবং সে অনুযায়ী তা দর্শকদের জন্য অনুমোদিত করা। এটি নির্ধারণ করে যে কোন বয়সের দর্শকের জন্য কনটেন্টটি উপযুক্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ, “U” (সকলের জন্য উপযুক্ত), “A” (শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য), বা “UA” (সর্বোচ্চ নির্দিষ্ট বয়সের শিশুদের জন্য) এমন বিভিন্ন সার্টিফিকেশন দেয়া হয়।
৩. কান্টেন্টের পরিবর্তনের ক্ষমতা
সেন্সর বোর্ড: সেন্সর বোর্ডের কনটেন্টে সরাসরি পরিবর্তন আনার ক্ষমতা রয়েছে। সেন্সর বোর্ড মনে করলে যে কোনো কনটেন্টের কিছু অংশ আপত্তিকর, তারা প্রযোজককে সেই অংশগুলো বাদ দিতে বা সম্পাদনা করতে বলে। যদি প্রযোজক সেই অংশগুলো পরিবর্তন না করে, তবে কনটেন্টটি প্রদর্শনের অনুমতি পায় না।
সার্টিফিকেশন বোর্ড: সার্টিফিকেশন বোর্ডের কাছে কোনো পরিবর্তন আনার ক্ষমতা নেই। এটি কেবলমাত্র কনটেন্ট যাচাই করে এবং তা কোন শ্রেণির দর্শকের জন্য উপযুক্ত তা নির্ধারণ করে। তবে, যদি কোনো কনটেন্ট নির্দিষ্ট বয়সের দর্শকদের জন্য উপযুক্ত না হয়, তারা সেই অনুযায়ী সার্টিফিকেশন দেয়।
৪. কাজের ধরন ও আইনি দিক
সেন্সর বোর্ড: সেন্সর বোর্ড সাধারণত সিনেমা ও অন্যান্য কনটেন্টকে সরকার বা দেশের আইন অনুযায়ী যাচাই করে। এর কাজ বেশি আইনি ভিত্তিক এবং দেশের আইন অনুযায়ী কনটেন্টটি যাচাই করার ক্ষমতা রাখে। এর প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কঠোর এবং সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত।
সার্টিফিকেশন বোর্ড: সার্টিফিকেশন বোর্ড মূলত নির্দিষ্ট বয়স বা শ্রেণির দর্শকদের জন্য কনটেন্ট প্রদর্শনের অনুমতি দেয়। তাদের কাজ নৈতিক মানদণ্ডের চেয়ে শ্রেণিবিন্যাস নির্ধারণে বেশি মনোযোগী। সার্টিফিকেশন বোর্ডের সিদ্ধান্ত অধিকাংশ সময় কনটেন্টের শ্রেণিবিন্যাসের ওপর কেন্দ্রীভূত থাকে।
৫. উদাহরণ
সেন্সর বোর্ড: সেন্সর বোর্ডের কাজ অনেক সময় বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো সিনেমায় রাজনৈতিক সংবেদনশীল বিষয়বস্তু থাকলে তা প্রায়ই সেন্সর বোর্ড দ্বারা কাটা পড়ে।
সার্টিফিকেশন বোর্ড: সার্টিফিকেশন বোর্ড প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি সিনেমাগুলিকে “A” সার্টিফিকেট দিতে পারে, যাতে ১৮ বছরের নিচের কেউ তা দেখতে না পারে। এর মাধ্যমে তারা কনটেন্টটি সরাসরি নিষিদ্ধ না করলেও তার প্রদর্শনের সীমাবদ্ধতা আরোপ করে।
সেন্সর বোর্ড ও সার্টিফিকেশন বোর্ডের মধ্যে পার্থক্য মূলত তাদের কাজ ও উদ্দেশ্যের মধ্যে নিহিত। সেন্সর বোর্ড যেখানে কনটেন্টের সামগ্রিক মান যাচাই ও সংশোধনের জন্য কাজ করে, সেখানে সার্টিফিকেশন বোর্ড কনটেন্টের শ্রেণিবিন্যাসের ওপর দৃষ্টি দেয়। কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে দুই বোর্ডেরই ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা সমাজের জন্য উপযুক্ত কনটেন্টের নিশ্চয়তা প্রদান করে এবং দর্শকদের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে।