ক্রেডিট কার্ড এখন ভ্রমণের সময় অর্থের ব্যবস্থাপনার অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এটি যেমন সুবিধাজনক, তেমনই কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। তাই ঘুরতে গিয়ে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো জানা গুরুত্বপূর্ণ।
সুবিধা:
১. সহজ লেনদেন: ভ্রমণের সময় বিদেশে বা অন্য শহরে অর্থের প্রয়োজন হলে, ক্রেডিট কার্ড সহজেই ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, এবং টিকিট বুকিংয়ে এটি গ্রহণযোগ্য।
২. জরুরি প্রয়োজন মেটানো: ভ্রমণের সময় কোনো জরুরি অবস্থায় হঠাৎ টাকা ফুরিয়ে গেলে, ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অতিরিক্ত খরচ করা সম্ভব। এই ক্ষেত্রে এটি একটি ব্যাকআপ হিসাবে কাজ করে।
৩. আন্তর্জাতিক লেনদেনের সুবিধা: অনেক ক্রেডিট কার্ড আন্তর্জাতিক লেনদেন সাপোর্ট করে, যার মাধ্যমে আপনি বিদেশে কোনো স্থানীয় কারেন্সির ঝামেলা ছাড়াই সহজে কেনাকাটা করতে পারেন।
৪. ক্যাশব্যাক ও রিওয়ার্ড পয়েন্ট: বেশিরভাগ ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটার ওপর ক্যাশব্যাক বা রিওয়ার্ড পয়েন্ট পাওয়া যায়, যা ভবিষ্যতে বিমান টিকিট, হোটেল বুকিং বা অন্যান্য সুবিধায় ব্যবহার করা যায়।
৫. কনভার্টেবল ইএমআই সুবিধা: বড় খরচ যেমন ট্যুর প্যাকেজ বা বিমানের টিকিটের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডে ইএমআই সুবিধা পাওয়া যায়, যা আপনার পেমেন্টকে কয়েক মাসে ভাগ করে নিতে সহায়তা করে।
৬. বীমা সুবিধা: কিছু প্রিমিয়াম ক্রেডিট কার্ড ভ্রমণের সময় দুর্ঘটনা বা বিমানের দেরি/বাতিলের ক্ষেত্রে বীমা সুবিধা দিয়ে থাকে।
অসুবিধা:
১. উচ্চ সুদের হার: যদি সময়মতো ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ না করা হয়, তাহলে এর ওপর উচ্চ সুদের হার প্রযোজ্য হয়। এটি আপনার ভবিষ্যৎ ব্যয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
২. বিভিন্ন ফি ও চার্জ: অনেক কার্ডে আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য অতিরিক্ত ফি (Forex charge) দিতে হয়। এছাড়া দেরি করে পেমেন্ট করলে লেট ফি, মিসড পেমেন্ট ফি প্রযোজ্য হয়।
৩. ক্রেডিট স্কোরের উপর প্রভাব: আপনি যদি বেশি খরচ করেন এবং তা সময়মতো পরিশোধ না করেন, তাহলে আপনার ক্রেডিট স্কোর নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যা ভবিষ্যতে ঋণ নিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
৪. সাইবার ঝুঁকি: ভ্রমণের সময় অপরিচিত স্থানে কার্ড ব্যবহার করলে হ্যাকিং বা জালিয়াতির ঝুঁকি থেকে যায়। বিশেষত, অসতর্কভাবে অনলাইনে কার্ডের তথ্য শেয়ার করলে তা চুরি হতে পারে।
৫. ক্যাশলেস সমস্যার সম্মুখীন: সব জায়গায় ক্রেডিট কার্ড গ্রহণযোগ্য নয়, বিশেষ করে দূরবর্তী অঞ্চল বা গ্রামীণ স্থানে। এই কারণে হাতে কিছু নগদ অর্থ রাখা জরুরি।
সিদ্ধান্ত:
ক্রেডিট কার্ড ভ্রমণের সময় একটি কার্যকর এবং সুবিধাজনক উপায় হলেও, এর ব্যবহার করতে হলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি উপকৃত হতে পারেন, তবে অযাচিত খরচ, সুদের হার, এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে।
১. ব্যবহারের আগে পরিকল্পনা করুন: যেকোনো ভ্রমণের পূর্বে আপনার বাজেট নির্ধারণ করুন এবং সেই অনুযায়ী ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করুন। অপ্রয়োজনীয় খরচ থেকে বিরত থাকুন এবং নিশ্চিত করুন যে মাস শেষে বিলটি সময়মতো পরিশোধ করবেন।
২. ক্যাশ ও বিকল্প পদ্ধতির ব্যবস্থা: সব সময় কিছু নগদ অর্থ সঙ্গে রাখুন। বিশেষ করে দূরবর্তী এলাকা বা স্থানীয় বাজারে কার্ড ব্যবহার করা সহজ নাও হতে পারে।
৩. নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন: আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সুরক্ষিত রাখুন এবং পাবলিক Wi-Fi ব্যবহার করে লেনদেন করা থেকে বিরত থাকুন। যে কোনো অস্বাভাবিক লেনদেনের জন্য আপনার ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
৪. বীমা সুবিধা ব্যবহার করুন: যদি আপনার ক্রেডিট কার্ডে ভ্রমণ বীমা সুবিধা থাকে, তবে তা ব্যবহার করুন। এটি জরুরি অবস্থায় আপনাকে সুরক্ষা দেবে।
সচেতন থাকুন
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকুন। এটা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে এবং অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে বাধা দেবে।
সর্বোপরি, যদি আপনি সঠিকভাবে পরিকল্পনা করেন এবং সচেতন থাকেন, তবে ক্রেডিট কার্ড ভ্রমণে আপনার অভিজ্ঞতাকে সহজ এবং আনন্দময় করতে পারে। স্মার্ট ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি ভ্রমণের সময় আর্থিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে পারবেন এবং একই সাথে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন।