ডিম আমাদের প্রাত্যহিক খাদ্যতালিকার অন্যতম পুষ্টিকর খাবার। এটি প্রোটিন, ভিটামিন, এবং খনিজে ভরপুর হওয়ার পাশাপাশি সহজেই প্রস্তুতযোগ্য এবং সুস্বাদু। তবে ডিমের সতেজতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ পচা ডিম খেলে পেটের সমস্যা থেকে শুরু করে ফুড পয়জনিং পর্যন্ত হতে পারে। তাই ডিম ভালো নাকি পচা, তা চিনে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিবেদনে ডিমের সতেজতা যাচাই করার কিছু কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. পানির মধ্যে ডিম ভাসানোর পরীক্ষা
ডিম ভালো নাকি পচা তা সহজেই বোঝার জন্য পানির ভাসানোর পরীক্ষা অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কার্যকর পদ্ধতি। ডিমের মধ্যে একটা বায়ু থলি থাকে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়। এই বায়ু থলির আকারের ওপর নির্ভর করে ডিম ভালো নাকি খারাপ হয়েছে তা জানা যায়।
কীভাবে পরীক্ষা করবেন:
একটি গ্লাস বা পাত্রে ঠান্ডা পানি নিন।
ডিমটি পানিতে দিন।
ফলাফল:
ডুবে গেলে: ডিম সম্পূর্ণ নতুন এবং তাজা। এটি নিরাপদে খাওয়া যায়।
অর্ধেক ভাসলে (তীর্যকভাবে): ডিম কিছুদিন পুরোনো হলেও এখনও খাওয়ার উপযোগী। তবে শীঘ্রই খেয়ে ফেলা উচিত।
সম্পূর্ণ ভেসে গেলে: ডিম পচে গেছে এবং তা খাওয়ার উপযোগী নয়।
২. ডিম ফাটিয়ে গন্ধ শোঁকা
ডিম পচে গেছে কি না, তা বোঝার জন্য গন্ধ অত্যন্ত কার্যকর সূচক। তাজা ডিমে কোনো তীব্র বা দুর্গন্ধ থাকে না, তবে পচা ডিমে একটি অত্যন্ত তীব্র সালফারের মতো দুর্গন্ধ থাকে।
কীভাবে পরীক্ষা করবেন:
ডিমটি ফাটিয়ে একটি বাটিতে নিন।
গন্ধ শোঁকুন।
ফলাফল:
কোনো গন্ধ না থাকলে: ডিম তাজা এবং নিরাপদে খাওয়া যাবে।
দুর্গন্ধ থাকলে: ডিমটি পচে গেছে এবং তা কোনোভাবেই খাওয়া উচিত নয়।
৩. ডিমের খোসার পরীক্ষা
ডিমের খোসার রঙ এবং টেক্সচার থেকেও আপনি এর সতেজতা যাচাই করতে পারেন। তাজা ডিমের খোসা সাধারণত মসৃণ এবং টাইট থাকে, এবং স্পর্শ করলে এটি শক্ত মনে হয়। কিন্তু খারাপ ডিমের খোসা কিছুটা রুক্ষ হতে পারে এবং চাপ দিলে নরম মনে হতে পারে।
কীভাবে পরীক্ষা করবেন:
ডিমটি হাতে নিয়ে ভালোভাবে লক্ষ্য করুন।
ফলাফল:
মসৃণ এবং শক্ত খোসা: ডিম তাজা।
রুক্ষ বা নরম খোসা: ডিমটি বেশ পুরনো এবং সম্ভবত খারাপ হয়ে গেছে।
৪. ডিমের কুসুম ও সাদা অংশ পরীক্ষা
ডিম ফাটানোর পরে এর কুসুম এবং সাদা অংশের টেক্সচার এবং আকার থেকেও সতেজতা বোঝা যায়। তাজা ডিমের কুসুম থাকে টানটান এবং গোল, আর সাদা অংশ থাকে ঘন। কিন্তু খারাপ ডিমের কুসুম ছড়িয়ে পড়ে এবং সাদা অংশ পাতলা হয়।
কীভাবে পরীক্ষা করবেন:
ডিম ফাটিয়ে একটি বাটিতে নিন।
ফলাফল:
টানটান কুসুম এবং ঘন সাদা অংশ: ডিম তাজা।
ছড়িয়ে পড়া কুসুম এবং পাতলা সাদা অংশ: ডিম পুরনো বা নষ্ট হতে পারে।
৫. প্যাকেটের এক্সপায়ারি ডেট দেখা
যদি আপনি প্যাকেটজাত ডিম কিনে থাকেন, তবে প্যাকেটের গায়ে থাকা এক্সপায়ারি ডেট দেখে সতেজতা যাচাই করা সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। প্যাকেটজাত ডিমের গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ থাকে, যা দেখে আপনি সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ডিমটি ব্যবহারযোগ্য কি না।
কীভাবে পরীক্ষা করবেন:
প্যাকেটের গায়ে থাকা এক্সপায়ারি ডেটটি লক্ষ্য করুন।
ফলাফল:
এক্সপায়ারি ডেটের মধ্যে থাকলে: ডিম তাজা থাকার সম্ভাবনা বেশি।
এক্সপায়ারি ডেট পেরিয়ে গেলে: ডিম খাওয়ার আগে সতর্ক হোন, কারণ এটি খারাপ হয়ে থাকতে পারে।
৬. ডিমের ওজন পরীক্ষা
ডিম যত পুরোনো হয়, ততই তা আর্দ্রতা হারায় এবং হালকা হতে শুরু করে। তাই, তাজা ডিম সাধারণত বেশি ভারী এবং খারাপ ডিম হালকা হয়। আপনি যদি ডিম হাতে নেন এবং তা অস্বাভাবিক হালকা মনে হয়, তবে এটি সম্ভবত পুরোনো এবং খারাপ।
কীভাবে পরীক্ষা করবেন:
ডিমটি হাতে তুলে নিন এবং ওজনের পরিবর্তন লক্ষ্য করুন।
ফলাফল:
ভারী হলে: ডিম তাজা।
অস্বাভাবিক হালকা হলে: ডিমটি পুরনো বা পচা।
ডিমের সতেজতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পচা ডিম খেলে শারীরিক অসুস্থতার ঝুঁকি থাকে। উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে আপনি সহজেই ডিমের সতেজতা যাচাই করতে পারবেন। পানিতে ভাসানোর পরীক্ষা, গন্ধ শোঁকা, খোসার টেক্সচার এবং ডিমের কুসুম ও সাদা অংশের টেক্সচার দেখে আপনি বুঝতে পারবেন ডিমটি ভালো নাকি পচা। ডিমের সতেজতা নিয়ে সন্দেহ থাকলে, সেটি ফেলে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। সতেজ ডিম খাওয়ার অভ্যাস করলে আপনি নিরাপদে এর পুষ্টিগুণ উপভোগ করতে পারবেন।