সত্যিই কি বিয়ের পর ওজন বাড়ে? কেন বাড়ে?

বিয়ের পর ওজন বৃদ্ধি একটি সাধারণ ঘটনা যা অনেকেই লক্ষ্য করে থাকেন। অনেক নবদম্পতি প্রথম কয়েক বছরের মধ্যে ওজন বাড়তে দেখেন, এবং এ নিয়ে গবেষণাও হয়েছে। তবে, কেন বিয়ের পর ওজন বাড়ে তা বোঝার জন্য বিভিন্ন মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক কারণ বিবেচনা করা প্রয়োজন। এই প্রতিবেদনটিতে সেই কারণগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে।

১. রুটিনের পরিবর্তন
বিয়ের পর জীবনযাপনের ধরন ও রুটিনে পরিবর্তন আসে। একক জীবনের তুলনায় দম্পতিদের মাঝে একসঙ্গে সময় কাটানো, একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, সিনেমা দেখা বা ঘরে সময় কাটানো বেশি হয়। বিশেষত, একসঙ্গে খাবারের আনন্দ উপভোগ করার ফলে অনেক সময় অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়, যা ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

২. সামাজিক অনুষ্ঠান ও আড্ডা
বিয়ে সাধারণত বড় একটা সামাজিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে চলে এবং বিয়ের পর নবদম্পতিকে বিভিন্ন দাওয়াত, পার্টি ও আড্ডায় অংশগ্রহণ করতে হয়। এ ধরনের অনুষ্ঠানে সুস্বাদু খাবারের আয়োজনে লোভ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও, বিয়ের পর সামাজিক জীবন বাড়ায় এবং এতে নিয়মিত খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম হতে পারে, যা ওজন বাড়ার কারণ।

৩. আবেগজনিত খাওয়ার প্রবণতা
বিয়ের পর দাম্পত্য জীবনের খুশি বা আবেগজনিত চাপের কারণে অনেকেই খাবার খেয়ে নিজেদের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। যেমন, কেউ যদি কোনো কারণে মানসিক চাপ বা হতাশায় ভোগেন, তাহলে তিনি খাবারের মাধ্যমে সান্ত্বনা পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। আবার খুশির মুহূর্তেও অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এই অতিরিক্ত খাওয়া ওজন বাড়ানোর অন্যতম কারণ।

৪. শারীরিক সক্রিয়তার অভাব
একক জীবনের তুলনায় দাম্পত্য জীবনে অনেকেই শারীরিক কার্যক্রমে কম সময় দেন। বিয়ের আগে ফিটনেস বজায় রাখতে যেভাবে ব্যায়াম করা হতো, বিয়ের পর সেই ধারা ধরে রাখা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। একে অপরের সঙ্গে সময় কাটানোর কারণে অনেকেই জিম বা ব্যায়ামের জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করতে পারেন না, যার ফলে ওজন বাড়তে থাকে।

৫. বয়সের প্রভাব
বিয়ের পর বেশিরভাগ মানুষের বয়সও বাড়তে থাকে। সাধারণত ৩০-এর পর শরীরের বিপাকীয় হার কমে যায়, অর্থাৎ শরীর খাদ্যকে কম শক্তিতে রূপান্তরিত করে। এর ফলে, একই পরিমাণ খাবার খেলে আগে যেমন ওজন হতো, এখন তার থেকে বেশি হতে পারে। বয়সের এই প্রাকৃতিক প্রভাবও ওজন বৃদ্ধির একটি কারণ।

৬. অলস জীবনযাপন
বিয়ের পর অনেকেই কর্মজীবনে স্থির হয়ে যান এবং মানসিক স্বস্তি লাভ করেন। বিশেষ করে যারা সংসারী হতে বেশি মনোযোগ দেন, তারা প্রায়ই অলস জীবনযাপন করতে শুরু করেন। এটি ধীরে ধীরে ওজন বাড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দৈনন্দিন শারীরিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ার ফলে শরীরের ক্যালোরি পুড়তে কম সময় নেয় এবং এই ক্যালোরি শরীরে চর্বি হিসেবে জমা হয়।

৭. গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান
বিয়ের পর ওজন বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হলো গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান। গর্ভাবস্থায় নারীদের ওজন বৃদ্ধি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, এবং সন্তান জন্মের পরও অনেক নারীর ওজন আগের অবস্থায় ফিরে আসতে সময় লাগে। এছাড়া, সন্তানের যত্ন নেওয়া এবং মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করার কারণে অনেক সময় নারীদের নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

ওজন বৃদ্ধির প্রভাব কমানোর উপায়

যদিও বিয়ের পর ওজন বৃদ্ধি একটি সাধারণ ঘটনা, তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেমন:

সুষম খাদ্যাভ্যাস: বিয়ের পরও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে হবে। একসঙ্গে খাবার উপভোগ করা গেলেও অতিরিক্ত খাওয়া এড়ানো উচিত।

নিয়মিত ব্যায়াম: শারীরিক সক্রিয়তা বজায় রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: দাম্পত্য জীবনের যেকোনো মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর উপায়ে মানসিক স্বস্তি অর্জনের চেষ্টা করা উচিত।

সুস্থ জীবনযাপন: ব্যস্ত সময়সূচির মধ্যেও সঠিক রুটিন বজায় রাখা ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

বিয়ের পর ওজন বৃদ্ধি একটি বাস্তব ঘটনা, যা শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভরশীল। যদিও এটি সাধারণ ঘটনা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক কার্যকলাপ ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। দাম্পত্য জীবন উপভোগের পাশাপাশি নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা বিয়ের পর সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *