প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময় “বোবায় ধরা” বা “স্লিপ প্যারালাইসিস”-এর অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে ঘুমের মধ্যে শরীর পুরোপুরি স্থবির হয়ে যায়, অথচ মস্তিষ্ক সজাগ থাকে। চোখ খোলা থাকলেও কেউ শরীর নাড়াতে পারে না, কথাও বলতে পারে না, এবং অনেক সময় ভয়ের অনুভূতি তৈরি হয়। এই অভিজ্ঞতা ভীতিকর মনে হলেও, বোবায় ধরা আসলে একটি শারীরিক প্রক্রিয়া যা ঘুম এবং জাগরণের মধ্যবর্তী সময়ে ঘটে।
বোবায় ধরা কী?
বোবায় ধরা হলো এমন এক অবস্থান, যেখানে ঘুম থেকে জাগা বা ঘুমাতে যাওয়ার মুহূর্তে মানুষ নিজেকে সম্পূর্ণ স্থবির অবস্থায় পায়। এ সময় মস্তিষ্ক সজাগ থাকে, কিন্তু শরীরের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নড়ানো যায় না। এ সময় অনেকেই অতিপ্রাকৃত বা অলৌকিক কিছু অনুভব করেন, তবে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বোবায় ধরা হলো একটি সাধারণ শারীরিক ঘটনা।
কেন বোবায় ধরা হয়?
বোবায় ধরার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। এটি সাধারণত তখন হয় যখন ঘুমের দুটি ধাপ, রেম (REM) এবং নন-রেম (NREM) ঘুমের মধ্যে তালমিল থাকে না। তবে কিছু শারীরিক ও মানসিক কারণ বোবায় ধরার ঝুঁকি বাড়াতে পারে:
ঘুমের অভাব: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর ও মস্তিষ্কের রুটিনের মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়, যা বোবায় ধরার কারণ হতে পারে।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: যারা মানসিক চাপ বা উদ্বেগে ভোগেন, তাদের মাঝে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।
অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচি: যারা অনিয়মিতভাবে ঘুমান, যেমন রাত জাগেন বা ভ্রমণের কারণে ঘুমের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনেন, তাদের মাঝে এ সমস্যা বেশি হতে পারে।
পিঠের ওপর শোয়া: পিঠের ওপর শুয়ে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে বোবায় ধরার ঝুঁকি বেশি।
জেট ল্যাগ: ভ্রমণের কারণে ঘুমের রুটিনে পরিবর্তন হলে বা বিভিন্ন টাইমজোনে ঘুমালে বোবায় ধরার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
বোবায় ধরা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা
অনেক মানুষ বোবায় ধরা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করেন। এ সময় প্রায়ই অনেকে দুঃস্বপ্ন দেখেন বা অতিপ্রাকৃত কিছু অনুভব করেন। অনেক সংস্কৃতিতে বোবায় ধরা অশুভ শক্তির উপস্থিতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এটি একটি সাধারণ শারীরিক অবস্থা, যা নির্দিষ্ট সময়ের পর স্বাভাবিকভাবেই চলে যায়।
বোবায় ধরার সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়
যদিও বোবায় ধরা কোনো গুরুতর শারীরিক সমস্যা নয়, তবে এটি অস্বস্তিকর ও ভীতিকর হতে পারে। কিছু সহজ পদ্ধতি মেনে চললে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব:
নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্ট্রেস কমানো: চাপমুক্ত জীবন যাপনের চেষ্টা করুন। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
পিঠের ওপর শোয়ার অভ্যাস পরিবর্তন: যারা প্রায়ই পিঠের ওপর শুয়ে ঘুমান, তারা পাশ ফিরে বা অন্য ভঙ্গিতে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
ঘুমের পরিবেশ উন্নত করুন: ঘুমের ঘরে অন্ধকার এবং শান্ত পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি। উজ্জ্বল আলো ও শব্দ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন: যদি নিয়মিতভাবে বোবায় ধরা সমস্যা সৃষ্টি করে, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষজ্ঞরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে এই সমস্যা সমাধান করতে পারেন।
বোবায় ধরা একটি স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থা। যদিও এটি ভীতিকর মনে হতে পারে, কিন্তু সঠিক অভ্যাস ও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিয়মিত ঘুম, মানসিক প্রশান্তি, এবং শারীরিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার মাধ্যমে বোবায় ধরা এড়ানো যায়।