খাবার পোড়া খাওয়া অনেকের কাছে একটি সাধারণ অভ্যাস, আবার কিছু মানুষের কাছে এটি অনাকাঙ্ক্ষিত। অনেকের ধারণা, পোড়া খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং এর ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। বিজ্ঞানীরা এবং পুষ্টিবিদরা এ বিষয়ে গবেষণা করেছেন এবং দেখেছেন, পোড়া খাবারের সঙ্গে কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্যান্সারের সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে এর পেছনে রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
১. অ্যাক্রিলামাইডের প্রভাব
পোড়া খাবারে বিশেষত, যখন শর্করা জাতীয় খাবার যেমন আলু, রুটি বা অন্যান্য শর্করা সমৃদ্ধ খাদ্য ভাজা বা গ্রিল করা হয়, তখন একটি রাসায়নিক যৌগ উৎপন্ন হয় যাকে বলা হয় অ্যাক্রিলামাইড (Acrylamide)। গবেষণায় দেখা গেছে যে এই অ্যাক্রিলামাইড দীর্ঘদিন ধরে বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে শরীরে ক্যান্সার কোষের বিকাশ ঘটতে পারে। বিশেষত, অতিরিক্ত তাপমাত্রায় খাবার রান্নার সময় অ্যাক্রিলামাইড তৈরি হয়।
২. হেটারোসাইক্লিক অ্যামাইনস (HCAs) এবং পলিসাইক্লিক অ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বনস (PAHs)
যখন মাংস উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না বা গ্রিল করা হয়, তখন হেটারোসাইক্লিক অ্যামাইনস (HCAs) এবং পলিসাইক্লিক অ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বনস (PAHs) নামক দুটি রাসায়নিক তৈরি হয়। HCAs এবং PAHs উভয়ই প্রাণীদের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ানোর সঙ্গে যুক্ত। যদিও মানুষের জন্য সরাসরি এর প্রভাব এখনও সম্পূর্ণভাবে প্রমাণিত হয়নি, গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘমেয়াদী এই ধরনের খাদ্য গ্রহণ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
৩. ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ানোর সম্ভাব্য কারণ
পোড়া খাবারের কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে, বিশেষত যদি তা নিয়মিত এবং অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা হয়। নিচে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো:
অতিরিক্ত কার্বনযুক্ত অংশ: পোড়া খাবারের কার্বনযুক্ত অংশে ক্যারসিনোজেনিক উপাদান তৈরি হয়, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রা: অতিরিক্ত তাপে রান্না করা খাবারে নির্দিষ্ট রাসায়নিক পরিবর্তন হতে পারে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. পোড়া খাবার খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
পোড়া খাবার খাওয়ার ফলে কিছু শরীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে:
পেটের অসুবিধা: অতিরিক্ত পোড়া খাবার খাওয়া হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
অ্যাসিডিটি এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা: পোড়া খাবার খাওয়ার পর অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
৫. পোড়া খাবারের ঝুঁকি কমানোর উপায়
পোড়া খাবার খাওয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে ও এর স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে কিছু কার্যকর উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে:
মাঝারি তাপমাত্রায় রান্না: খাবার কম তাপে রান্না করার চেষ্টা করা উচিত, বিশেষত মাংস ও শর্করা সমৃদ্ধ খাবার।
পোড়া অংশ বাদ দেওয়া: খাবারের পোড়া অংশ এড়িয়ে চলা উচিত এবং এই অংশগুলো না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গ্রিল করার সময় সতর্ক থাকা: যখন গ্রিল করা হয়, তখন খাবারকে অতিরিক্ত পুড়িয়ে না ফেলে পরিমিতভাবে গ্রিল করা উচিত।
পোড়া খাবার এবং ক্যান্সারের সম্পর্ক নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। বিশেষ করে, অ্যাক্রিলামাইড, HCAs এবং PAHs-এর মতো রাসায়নিক যৌগগুলো ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। তবে সব ধরনের পোড়া খাবারই যে ক্যান্সারের কারণ হবে, এমন সরাসরি প্রমাণ নেই। তবুও, স্বাস্থ্য সচেতন থাকা এবং পোড়া খাবার নিয়ন্ত্রিতভাবে খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত, যাতে দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো যায়।