চাল পলিশ করা হয় কীভাবে? এর পুষ্টিগুণ কতটা স্বাস্থ্যকর?

চাল আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বিশেষত এশিয়ার দেশগুলোতে। তবে বাজারে বিক্রি হওয়া চালের বেশিরভাগই পলিশ করা হয়, যা এর স্বাভাবিক রূপ থেকে অনেকটাই আলাদা। পলিশ করার প্রক্রিয়ায় চালের বাইরের স্তরগুলি সরিয়ে ফেলা হয়, যা চালকে চকচকে এবং সাদা করে তোলে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাল কতটা পুষ্টিগুণ হারায়, তা অনেকের কাছেই অজানা। এই প্রবন্ধে আমরা চাল পলিশ করার পদ্ধতি এবং পলিশ করা চালের পুষ্টিগুণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

১. চাল পলিশ করার প্রক্রিয়া
চাল পলিশ করার প্রক্রিয়া খুবই সাধারণ। চাল পলিশের জন্য বিশেষ ধরনের মেশিন ব্যবহার করা হয়। এই মেশিন চালের বাইরের খোসা এবং তুষ সরিয়ে চালকে সাদা এবং মসৃণ করে তোলে। পলিশ করার প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়:

প্রাথমিক পর্যায়: চালের বাইরের খোসা বা তুষ সরানো হয়। এটিকে ‘হালকা মাড়াই’ বলা হয়, যা চালকে তার স্বাভাবিক বাদামি রং থেকে সাদা রঙে নিয়ে আসে।

পলিশ করা: চালের বাইরের স্তরগুলি মেশিনে ঘষে ঘষে সরানো হয়। এতে চালের সাদা ও মসৃণ আকার দেখা যায়। এতে চাল দেখতে আকর্ষণীয় হলেও এর পুষ্টিগুণ অনেকটাই কমে যায়।

ভেজিটেবল অয়েল প্রয়োগ: কিছু ক্ষেত্রে চালকে আরও চকচকে করতে তার ওপর ভেজিটেবল অয়েলের হালকা স্তর প্রয়োগ করা হয়।

২. পলিশ করা চালের পুষ্টিগুণের অবস্থা
পলিশ করা চাল দেখতে সাদা এবং আকর্ষণীয় হলেও এটি পুষ্টিগুণের দিক থেকে বাদামি বা অপ্রস্তুত চালের তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকে। কারণ পলিশ করার সময় চালের বাইরের স্তর, বিশেষ করে ব্র্যান (bran) অংশ, সরিয়ে ফেলা হয়। এই অংশেই থাকে চালের অধিকাংশ পুষ্টি উপাদান।

ফাইবারের ঘাটতি: চালের ব্র্যান অংশে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে। পলিশ করার ফলে এই ফাইবারের পরিমাণ কমে যায়।

ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের অভাব: পলিশ করা চাল থেকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থগুলিও অপসারিত হয়। এতে পুষ্টির প্রয়োজনীয় উপাদান হারিয়ে যায়।

ক্যালোরি বৃদ্ধি: পলিশ করা চালে ফাইবার কম থাকে এবং ক্যালোরি বেশি থাকে, যা বেশি খেলে ওজন বৃদ্ধি এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৩. পুষ্টির তুলনা: পলিশ করা চাল বনাম বাদামি চাল
বাদামি চালের সাথে পলিশ করা চালের পুষ্টিগুণ তুলনা করলে দেখা যায়, বাদামি চালে বেশি ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ থাকে। নিচে একটি সাধারণ তুলনা দেওয়া হলো:

ফাইবার: বাদামি চালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। পলিশ করা চালে এই উপাদান প্রায় নেই বললেই চলে।

ভিটামিন বি: বাদামি চালে ভিটামিন বি১, বি৩ এবং বি৬ এর প্রাচুর্য থাকে, যা পলিশ করা চালে তুলনামূলকভাবে কম।

এন্টিঅক্সিডেন্ট: বাদামি চালে কিছু প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

৪. পলিশ করা চাল খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর?
পলিশ করা চালের পুষ্টিগুণ অনেকটাই কম হওয়ায় এটি নিয়মিত খেলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়তে পারে। বিশেষত যারা ডায়াবেটিস বা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্য পলিশ করা চাল কম উপকারী। পলিশ করা চাল রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

৫. কেন পলিশ করা চাল জনপ্রিয়?
পলিশ করা চাল দেখতে সাদা এবং চকচকে হওয়ায় এটি বেশিরভাগ মানুষ পছন্দ করেন। এছাড়াও, পলিশ করা চাল রান্না করা সহজ এবং এটি দ্রুত নরম হয়, যা অনেকের জন্য সুবিধাজনক। তবে এর স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কথা বিবেচনা করে, পুষ্টিবিদরা প্রায়ই অপ্রস্তুত বা বাদামি চাল খাওয়ার পরামর্শ দেন।

চাল পলিশ করার মাধ্যমে এর বাহ্যিক রূপে পরিবর্তন আসলেও পুষ্টিগুণের দিক থেকে এটি অনেকটাই কমে যায়। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখতে নিয়মিত পলিশ করা চালের পরিবর্তে বাদামি বা অপ্রস্তুত চাল খাওয়া ভালো। দীর্ঘমেয়াদে এটি আপনাকে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজের প্রয়োজনীয়তা পূরণে সাহায্য করবে, যা আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *