ধূমপায়ীদের ফুসফুস ৯০ শতাংশ পর্যন্ত দুর্বল হয় কেন?

ধূমপায়ীদের ফুসফুস কেন দুর্বল হয়, তা বুঝতে হলে প্রথমে ধূমপানের প্রভাব এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক উপাদানগুলোর ব্যাপারে জানতে হবে। ধূমপান শুধুমাত্র একটি অভ্যাস নয়, এটি ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী এবং ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলে। সিগারেটের ধোঁয়ার প্রতিটি শ্বাসে ফুসফুসে বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান প্রবেশ করে, যা ধীরে ধীরে ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। এ কারণেই ধূমপায়ীদের ফুসফুস স্বাভাবিকের তুলনায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

ধূমপানের কারণে ফুসফুসের দুর্বলতা

ধূমপান থেকে ফুসফুসে প্রবেশ করা ক্ষতিকর পদার্থগুলো একের পর এক মারাত্মক ক্ষতি করতে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি উপাদান হলো নিকোটিন এবং টার। এসব উপাদান ধূমপায়ীদের ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করে এবং ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।

কার্বন মনোক্সাইড: ধূমপানের ধোঁয়ার সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে কার্বন মনোক্সাইড। এই গ্যাসটি রক্তে মিশে হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে যুক্ত হয়, যার ফলে অক্সিজেন পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। এতে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না এবং ফুসফুসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

নিকোটিন: নিকোটিন সিগারেটের মূল নেশাজনিত উপাদান। এটি ফুসফুসের শ্বাসনালী সংকুচিত করে, যার ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যায়। দীর্ঘমেয়াদে নিকোটিনের প্রভাব ফুসফুসের টিস্যুগুলোর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করে, ফলে ফুসফুস দুর্বল হয়ে পড়ে।

টার: ধূমপানের ধোঁয়ার সাথে টার ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে ফুসফুসের বায়ুথলিগুলো (এলভিওলি) ধ্বংস করতে থাকে। এটি ফুসফুসের স্বাভাবিক অক্সিজেন শোষণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এবং ফুসফুসের সেলগুলোকে অকার্যকর করে ফেলে।

ধূমপায়ীদের ফুসফুসের দুর্বলতার প্রধান কারণ

ধূমপানের কারণে বিভিন্ন ধরনের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন:

এমফিসেমা: ফুসফুসের বায়ুথলিগুলো ফেটে গিয়ে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে শ্বাস নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হয় এবং রোগী ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়।

ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস: ধূমপানের কারণে শ্বাসনালীর ব্রঙ্কিয়াল টিউবগুলিতে ক্রনিক প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এর ফলে কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসনালীর সমস্যার সৃষ্টি হয়।

ফুসফুস ক্যান্সার: ধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পদার্থ ফুসফুসের কোষের ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে ক্যান্সারের কোষ গঠন হতে থাকে।

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

ফুসফুসের এই দুর্বলতার ফলে ধূমপায়ীরা শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকে ব্যথা, এবং ক্লান্তিতে ভুগতে থাকে। এমনকি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে গেলে রোগীকে কৃত্রিম অক্সিজেনের সাহায্যে বেঁচে থাকতে হতে পারে। এই ধরনের রোগীরা বিভিন্ন সংক্রমণ যেমন নিউমোনিয়া এবং ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

ধূমপায়ীদের ফুসফুস দুর্বল হওয়ার মূল কারণ হলো ধূমপানের কারণে ফুসফুসের টিস্যু ধ্বংস হওয়া এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারানো। ফুসফুসের এই দুর্বলতা একসময় প্রাণঘাতী হতে পারে। ধূমপান থেকে বিরত থাকা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা গ্রহণ করার মাধ্যমে ফুসফুসকে রক্ষা করা সম্ভব। তাই নিজের এবং পরিবারের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ধূমপান পরিত্যাগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *